ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণ, নিহত ৮

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে গতকাল সোমবার গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২৪ জন। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে আশপাশের কয়েকটি গাড়ির কাচও ভেঙে যায়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের গেট নম্বর ১-এর সামনে এ বিস্ফোরণ ঘটে।  দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও মুম্বাইজুড়ে হাই এলার্ট জারি করেছে প্রশাসন।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের পর আশপাশের তিন থেকে চারটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায় এবং সেসব গাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিল্লি পুলিশ বলেছে, লালকেল্লার কাছে অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের পরপরই আহতদের উদ্ধার করে পাশের লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ (এলএনজেপি) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আটজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। বিস্ফোরণ স্থলের ভিডিওতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের তীব্রতায় একটি ভ্যানের দরজা উড়ে গেছে এবং একটি গাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

নয়াদিল্লির ফায়ার সার্ভিস বলেছে, লালকেল্লার মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পরপরই দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছে। ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ২০টি গাড়ি সেখানে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছে এবং ওই এলাকায় যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমার বাড়ির ছাদ থেকে আগুনের বিশাল গোলা দেখতে পেয়েছি। বিস্ফোরণের ভয়াবহ শব্দ শোনা গেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, আশপাশের ভবনের জানালা কেঁপে উঠেছে।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি গুরদুয়ারায় ছিলাম। হঠাৎ প্রচ- শব্দ শুনি। বিস্ফোরণের শব্দ এত ভয়াবহ ছিল যে, কী ঘটেছে তাৎক্ষণিকভাবে তা বুঝতে পারিনি।’

দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে সাতটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে পুলিশ ও সেনা। আহতদের মধ্যে আটজন লোকনায়ক হাসপাতালে মারা যান। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ ও কিছু সন্দেহজনক উপাদান উদ্ধার করা হয়েছে। একটি বিশেষ দল তদন্তে নামছে এবং দেখা হচ্ছে এটি দুর্ঘটনাজনিত নাকি পরিকল্পিত হামলা ছিল।

ঘটনার পর দিল্লি-মুম্বাই শহরে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সব মেট্রো স্টেশন, জনবহুল এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। স্থানীয়রা আতঙ্কিত এবং নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

উল্লেখ্য, লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনটি দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা দুর্গের কাছেই অবস্থিত, যা শহরের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। লালকেল্লা বর্তমানে ভারতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ। আগে এটি ছিল মুঘল সম্রাটদের রাজপ্রাসাদ, সম্রাট শাহজাহান এটি নির্মাণ করেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মুঘল বাদশাহরা এখানেই বসবাস করতেন। এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত একটি জাদুঘর ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।

এদিকে দিল্লির অদূরে ফরিদাবাদে এক ভাড়াবাড়িতে গতকাল সোমবার হানা দেয় রিয়ানা এবং কাশ্মীর পুলিশের যৌথবাহিনী। উদ্ধার করা হয় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক এবং বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র। ২০টি বোমার টাইমার, রিমোট এবং ওয়াকিটকিও ছিল ওই বিস্ফোরকের সঙ্গে। ফরিদাবাদের ঘটনার পর বিবৃতি দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর সঙ্গে জইশ জঙ্গিদের যোগ রয়েছে। এ ছাড়া আনসার ঘাজওয়াত-উল-হিন্দ নামের আর এক পাকিস্তানি গোষ্ঠীর খোঁজও মিলেছে। তারপরই দিল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনা স্বভাবতই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।