ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

বললেন জেলা পুলিশ সুপার

চট্টগ্রামে পুলিশ থাকবে নয়তো সন্ত্রাসীরা

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

** টার্গেট কিলিংয়ে ছয় গ্রুপ সক্রিয়

জেলার রাউজান, হাটহাজারী উপজেলাসহ চট্টগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় টার্গেট কিলিং মিশনে ৬টি গ্রুপ সক্রিয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সান্তু। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সংঘটিত কয়েকটি হত্যাকা-ের ঘটনায় এসব গ্রুপের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে ভবিষ্যৎ তদন্তের স্বার্থে টার্গেট কিলিং গ্রুপে কারা কারা সম্পৃক্ত সে তথ্য জনসম্মুখে প্রচার করতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই চট্টগ্রামে পুলিশ থাকবে নয়তো সন্ত্রাসীরা থাকবে। পুলিশ ও সন্ত্রাসী পাশাপাশি থাকা সম্ভব না। সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা আত্মসমর্পণ করে আইনি প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ হয়ে আসুন। তা না হলে আপনাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশের এই কর্ণধার।

তিনি আরও বলেন, গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীস্থ মদুনাঘাট ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় চাঞ্চল্যকর হাকিম হত্যাকা-ে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় হত্যাকা-ে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাকিব ও শাহেদ। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ১টি চায়না রাইফেল, ১টি শটগান, ৪৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি (৭.৬২), ১৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি (৭.৬৫), ৭টি ম্যাগাজিন, ২টি রামদা, ১টি রকেট ফ্লেয়ার। অভিযানে ৫০ পিস ইয়াবা, ২৫০ গ্রাম গাঁজা এবং  ৯৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

জেলা পুলিশ সুপার আরও বলেন, উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্রের মধ্যে বেশকিছু অস্ত্র আব্দুল হাকিম হত্যাকা-ে ব্যবহার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের তথ্যভা-ার বলছে, আব্দুল হাকিম হত্যাকা-ের জড়িত থাকার অভিযোগে ৩১ অক্টোবর রাউজান থানাধীন বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মো. আব্দুল্লাহ খোকনকে (প্রকাশ ল্যাংড়া খোকন) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

খোকনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ নভেম্বর রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকা-ে জড়িত মো. মারুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারুফের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে রাউজানে লুকিয়ে রাখা অস্ত্রভা-ার এবং সাকলাইন হোসেন নামে অপর এক আসামির সন্ধান পায় পুলিশ।

৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. সাকলাইন হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ, জিয়া ও সাকলাইনের দেওয়া তথ্যমতে, গত সোমবার রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা। এ সময়  সাকিব ও শাহেদ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর বিকেলে ব্যবসায়ী হাকিম নিজের গাড়িতে করে শহরে ফিরছিলেন। মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে আসা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও হাটহাজারী থানা যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে।