ঢাকা শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

লকডাউনে ঢাকা ফাঁকা, যান চলাচল ছিল সীমিত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম
  • সকাল থেকে যানবাহন ছিল সীমিত, বিকেলে বেড়েছিল চলাচল
  • রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে ছিল পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির উপস্থিতি
  • নিরাপত্তা ও যাত্রীর অভাবে দূরপাল্লার বাস চলাচলও ছিল কম

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউনে অনেকটাই ফাঁকা ছিল রাজধানী ঢাকা। লকডাউনকে ঘিরে নানা আতঙ্ক ছড়ানোর কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যানবাহন এবং মানুষের চলাচল ছিল সীমিত। তবে বিকেলে যানবাহনের চলাচল কিছুটা বেড়েছিল। যান চলাচল ও ঘর থেকে বের হওয়ার মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও নর নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতে সকাল থেকেই রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কড়া উপস্থিতি। সন্দেহজনক মনে হলেই পড়তে হয়েছে তল্লাশির মুখে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, শাহবাগ, ফার্মগেট, সায়েন্সল্যাব ও কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজির মতো যানবাহনের চলাচল ছিল কম। নিয়মিত যারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তাদের স্টপেজে অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছুক্ষণ। তারপরই দেখা মেলে কোনো বাসের। ফলে অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতেও দেখা যায়। গণপরিবহন যেমন কম ছিল, তেমনি যাত্রীও ছিল তুলনামূলক কম। তবে বেশির ভাগ সড়কেই অটোরিকশার আধিক্য গেছে।

এ ছাড়া শহরের ব্যস্ততম মোড়গুলোতেও ছিল অস্বাভাবিক নীরবতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে টহল জোরদার করে। রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অফিসগামী কর্মী ও শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের এক অভিভাবক জানান, পরিস্থিতি অনিশ্চিত মনে হওয়ায় সন্তানকে স্কুলে পাঠাইনি। পল্টনে এক ব্যাংক কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, বাস না পেয়ে হেঁটে অফিসে গেছি। সিএনজির ভাড়া দ্বিগুণ নিচ্ছে।

মতিঝিলগামী যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, বাস খুব কম। হঠাৎ বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এতে বাসে চড়াও বেশ ঝুঁকি। যত ভোগান্তি আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত রোগীর স্বজন আজিজুল হক সুজন বলেন, মায়ের অসুস্থতা নিয়ে সকালে উত্তরা থেকে রওনা দেই। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হইনি। তারপরও এক ধরনের শঙ্কা কাজ করেছে।

রাজধানীর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আজ (গতকাল) মূল সমস্যা যানজট নয়, বরং গাড়ির অভাব। সাধারণ দিনের তুলনায় আজ অন্তত ৬০ শতাংশ কম গণপরিবহন রাস্তায় নেমেছে। চালক ও হেলপাররা সংঘর্ষ বা ভাঙচুরের আশঙ্কায় গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

এ পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচলেও। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। তারা বলেন, এত দামি গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে যদি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ছোট মালিকরা নিঃস্ব হয়ে যাবে। যাত্রী থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এসব আশঙ্কায় অনেকেই সকাল থেকে বাস বন্ধ রেখেছেন। যদিও বাস চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকেও বাস ছাড়তে তেমন একটা দেখা যায়নি। সকাল থেকে কয়েকটি বাস ছাড়লেও অধিকাংশ বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডেও।

গাবতলী বাস টার্মিনাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই প্রায় ফাঁকা। যাত্রী কম থাকায় নির্ধারিত সময়ে অনেক বাস ছাড়েনি। গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারম্যান আলী আজগর বলেন, যাত্রী অনেক কম। সকাল ৮টার মধ্যে সাধারণত অন্তত ৫টি বাস ছাড়ে, সেখানে মাত্র ২টি বাসে যাত্রী পেয়েছি, দুটোই ফরিদপুরের। বরিশাল, সাতক্ষীরা লাইনে কোনো যাত্রী পাইনি।

সোহাগ পরিবহনের কর্মী সজিব জানান, যশোরগামী সকাল সাড়ে ৯টার গাড়ি বন্ধ রেখেছি, যাত্রী নেই। সকালের দুটি গাড়ি ছাড়লেও চার-পাঁচজনের বেশি যাত্রী পাইনি।

তবে দুপুরের পর থেকে রাজধানীতে ধীরে ধীরে যান চলাচল বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যায় মোটামুটি কিছুটা স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।