ঢাকা শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

ভোটের দিনে গণভোট

আলোচনা করে মত জানাবে ইসি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম

গণভোট প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সরকার থেকে গণভোট নিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা আসার পরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত নেবে। এদিন রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন সিইসি। এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, তপশিল ঘোষণার পর কোথাও অনিয়ম দেখা গেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথমবারের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপের প্রথম ধাপে উপস্থিত রয়েছেন ছয়টি দলের প্রতিনিধিরা। দলগুলোর সঙ্গে ১১টি আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে কমিশন।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসির মতামত কী, চ্যালেঞ্জ হবে কি না, সংসদ নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এখানে আমি সংলাপে ছিলাম। বক্তব্য শুনিনি। কী বলেছেন, না বলেছেন আমি জানি না। যেহেতু আমি শুনিনি, বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমরা ফরমালি বিষয়গুলো জানলে, সবাই বসে কমিশনে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের মতামত দিতে পারব। এখন মতামত দেওয়া যথার্থ হবে না। আমি বক্তৃতাই শুনিনি আসলে। আমি মতামত দিতে চাই না।

তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একসঙ্গে দুটি নির্বাচনে কিছু সুফল রয়েছে। এতে নতুন করে কোনো আয়োজন করতে হবে না। ফলে, আলাদা করার চেয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় কম হবে। কেননা, একই ভোটকেন্দ্রে শুধু কক্ষ বাড়িয়ে, একটি ব্যালট বাড়িয়ে ভোট নেওয়া যাবে। এতে ভোট কর্মকর্তার সংখ্যা কিছুটা বাড়বে। আর ব্যালট বক্স কিছুটা বাড়াতে হবে। তবে একসঙ্গে ভোট করলে গণনায় অনেক সময় লেগে যাবে। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাত ফুরিয়ে যেতে পারে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় ধরা হয়েছে। এর সঙ্গে গণভোটের জন্য আরো তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকা লাগতে পারে। আর আলাদা করে গণভোট করতে গেলে প্রায় একই রকম অর্থ ব্যয় হতে পারে।

এ সময় সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে খেলবে। ইসি নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে চায়। কিন্তু খেলোয়াড়েরা সহযোগিতা না করলে কমিশন নিরপেক্ষতা হারাবে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচন কমিশন পোস্টার নিষিদ্ধ করলেও ঢাকা শহর এখনো পোস্টারে ছেয়ে আছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ইসি পোস্টার নিষিদ্ধ করার পরও শহরের যে চিত্র, তা অনভিপ্রেত। পোস্টারগুলো যদি দলগুলো নিজেরা সরিয়ে ফেলে, এটা হবে সবচেয়ে ভদ্র আচরণ। আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কমিশন কোনোভাবেই ছাড় দেবে না।

বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিশন চাপে রয়েছে বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, একটি বিশেষ পরিস্থিতি ও বিশেষ সরকারের অধীন নির্বাচন করতে গিয়ে কমিশনের ওপর নানা ধরনের চাপ আসছে। এসব চাপের কারণে নির্বাচনে অংশীজনদের কাছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসি এই অপব্যবহারকে একটি ‘মুসিবত’ (বড় বিপদ) হিসেবে উল্লেখ করেন।

এদিন আলোচনার জন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সংলাপে ডাকা হয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে।

বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ডাকা হয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে (বিএনএম)।

ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ১১টি বিষয়ে আলোচনা হয় সেগুলো হলোÑ ১. তপশিল ঘোষণার আগে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয়, ২. তপশিল ঘোষণার পর আচরণবিধি প্রতিপালন, ৩. আচরণবিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামা সম্পাদন, ৪. প্রার্থীদের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অঙ্গীকারনামা সম্পাদন, ৫. পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসী ভোট বাস্তবায়ন, ৬. তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচনি এজেন্ট নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা, ৭. ভুল তথ্য ও অপতথ্য প্রতিরোধ করা, ৮. নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা, ৯. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গ না করা। লিঙ্গ, বর্ণ ও ধর্ম নিয়ে কোনো বৈষম্য না করা, ১০. ধর্মীয় উপাসনালয়কে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার না করা, ১১. এআই সম্পাদিত ভিডিও দিয়ে প্রতিপক্ষ, লিঙ্গ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করা।