জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য যে গণভোট হবে, সেখানে তার দলসহ আট দল সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলবে। জনগণকেও গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত আট দল এই যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। এর আগে এদিন বেলা ১১টায় আল ফালাহ মিলনায়তনে আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দল শুরু থেকেই সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারের অনেক বিষয়ে একটি দল বিরোধিতা করেছে। তাই জাতিকে সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকারও যেন আগে কী ছিল, নতুন করে কী কী সংস্কার হচ্ছে, সেটি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে, প্রচারপত্র বিলি করে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রচার করে জনগণকে জানায়।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অনলাইনে একটি দলের কর্মিবাহিনী আগে থেকেই গণভোটে ‘না’-এর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে কারা সংস্কারের পক্ষে নেই, সংস্কারের বিরোধিতা করছে, জাতি তাদের চিনতে পারল। গোটা জাতি সংস্কারের পক্ষে। যারা এর বিপক্ষে যাবে, জাতি নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। আগের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, তিনজন উপদেষ্টা সরকারপ্রধানকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তারা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন।
সেই তিনজন উপদেষ্টা কারা, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তাদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ আট দলের কাছে আছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো সময়মতো সামনে আনা হবে। সরকার যেন এ বিষয়ে সজাগ থাকে। প্রধান উপদেষ্টা যেন তার নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখেন।
আট দলের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দলের লিয়াজোঁ কমিটি আছে। শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। তারা আলোচনা করে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। দলগুলোর সব দাবি পূরণ হয়নি। এ জন্য আন্দোলন চলমান। সরকারের তিন উপদেষ্টার ‘মিসগাইডিং ভূমিকার কারণেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত হচ্ছে না বলে মনে করছে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। তাদের তিনটি দাবি এখনো পূরণ করা হয়নি। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা না হলে দলগুলো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দলের কর্মসূচির কারণে জাতীয় নির্বাচন প্রভাবিত হবে না। বরং এই আন্দোলনের কারণে সংস্কার প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গণভোটে যাচ্ছে। এটা আন্দোলনেরই ফসল। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতেই এই আন্দোলন ভূমিকা রাখবে।
কর্মসূচিতে তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের দিন জামায়াতসহ জোটের আটটি দল মাঠে থাকবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউনকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা অতীতের কর্মসূচিতেও মাঠে ছিলাম, এবারও ফ্যাসিবাদের পক্ষে নাশকতার কোনো সুযোগ জাতি দেবে না। তারা (আওয়ামী লীগ) এটার সুযোগ পাবে না। আমরা আট দল মাঠে থাকব।’
এদিকে গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে ‘জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন কেন’ জামায়াতের উদ্দেশে এমন প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভালো হয়ে যান।’ এ বিষয়ে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘উনি যা বলেছেন, আমাদের আট দলের একই কথা ওনার জন্য প্রযোজ্য। এটা ওনাকে অনুরোধ করছি।’

