ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ

এনসিপিসহ তিন দলের গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১০:৪১ পিএম

আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে জনমত গঠন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তিশালী করতে নতুন এ জোট গঠন হয়েছে বলে জানান দলগুলোর নেতারা।

গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে তিন দলের নেতারা নতুন এ জোট গঠনের ঘোষণা দেন। এ নতুন জোটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন। নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের আরও অনেকগুলো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা চাই, জুলাইয়ের শক্তিগুলো যারা পরিবর্তনের পক্ষে আছে, যারা পুরোনো পথে যেতে চায় না, তারা আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। এই নির্বাচনে আমরা একসাথে, এক মার্কায় অংশগ্রহণ করব। এই প্রত্যাশা আমরা রাখছি।

রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে সরব এমন আরও কিছু দল, সংগঠন, মোর্চা, প্ল্যাটফর্ম ও প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি এ জোটে যুক্ত হবে বলে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান থেকে আশা প্রকাশ করা হয়। নতুন এ রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আমরা যারা সংস্কারের পক্ষে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম এবং মর্যাদাবান রাষ্ট্রের পক্ষে এত দিন লড়াই করেছি, তারা এই জোটে ঐক্যবদ্ধ থাকব। এটি শুধু নির্বাচনি জোট নয়; এই জোটটা মূলত রাজনৈতিক জোট।

নাহিদ ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা একটা ঐক্য প্রক্রিয়ার ভেতরে ছিলাম। আমরা চেষ্টা করছিলাম, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যে পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছিল, গত প্রায় দেড় বছরে আমরা কিন্তু তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমাদের সে ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় হতাশা রয়েছে। আমরা দেখেছি, ঐকমত্য কমিশনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্ন শক্তি সংস্কারের বিরোধিতা করেছে। বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা যারা সংস্কারের পক্ষে, পরিবর্তনের পক্ষে এবং গণঅভ্যুত্থানকে সফল করার জন্য তার আকাক্সক্ষাগুলোকে সফল করার জন্যই আন্তরিকভাবে কাজ করে এসেছি।

তিনি বলেন, আমরা যারা আন্তরিকভাবে চাই, আমরা সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়া আজকে শুরু হয়েছে এবং এটা চলমান থাকবে। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান করছি, বার্তা দিচ্ছি, গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে পুরোনো রাজনীতির পথে আর ফেরত যেতে দেব না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশ এবং আগের বাংলাদেশ এক হবে না। আমরা নানা আলামত দেখছি যে, বাংলাদেশ হয়তো আগের মতো হয়ে যাবে। আমরা সেই ধরনের হতাশা এবং ভীতি মানুষের ভেতরে দেখতে পাচ্ছি। আমরা সেই সাহসটার জানান দিতেই আজকে এসেছি। আমরা আমাদের শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে পরিবর্তনের যাত্রা শুরু হয়েছে সেই যাত্রার পথে থাকব। যারা অন্যান্য রাজনৈতিক দল রয়েছেন, যারা এই পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করতে চায়Ñ আমরা তাদের আহ্বান জানাব এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে। এই ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তিনটি রাজনৈতিক সংগঠন সংস্কার সামনে রেখে, বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির প্রশ্ন সামনে রেখে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের এই যৌথ প্রক্রিয়ার আমরা নাম দিয়েছি ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট বলছি এই কারণে যে, বাংলাদেশের বিগত ১৬ বছর এই লড়াইটা কিন্তু হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কারে আলাপগুলো ছিল। ফলে নির্বাচন শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য হবে না, এই নির্বাচনকে আমরা রাজনৈতিক নির্বাচনে পরিণত করতে চাই। দেশবদলের জন্য, সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য এবং আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির যাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই এবং আমরা তাই ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করব নির্বাচনে।