ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শিশুদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম

বাংলাদেশে শিশুদের মাঝে হঠাৎ করে বেড়েছে টাইপ ১ ডায়াবেটিস । যদিও এটি বংশগত রোগ, তবে বাংলাদেশের মতো দেশে এটি নিয়ে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো সীমিত।

শিশুদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস কী, কেন হয়, কী কী লক্ষণ দেখা যায়, চিকিৎসা ও করণীয় বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রেসক্রিপশন কেয়ারের (টঙ্গী) ডা. মো. সাইদুজ্জামান সাইদ।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস কী?

টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলো- এমন একটি অবস্থা, যেখানে শিশুর শরীরে ইনসুলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায় বা খুব কম পরিমাণে তৈরি হয়। ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন, যা রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন ছাড়া গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্তে চিনি বেড়ে যায়। এটি মূলত একটি অটোইমিউন রোগ। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে নিজেরই ইনসুলিন তৈরি করা কোষকে ধ্বংস করে ফেলে।

লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • খুব বেশি পিপাসা লাগা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • বারবার ক্ষুধা লাগা
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা
  • ঘন ঘন সংক্রমণ (যেমন: চামড়ার ফুসকুড়ি, ফাংগাল ইনফেকশন)
  • ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে প্রস্র্রাব ধরে রাখতে না পারা
  • অনেক সময় এসব লক্ষণ অজান্তে উপেক্ষিত হয়। এতে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ডায়াবেটিস কোমাতেও চলে যেতে পারে।

বাংলাদেশে কি অবস্থা

বাংলাদেশে শিশুদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা এখনো খুবই কম। গ্রামের দিকে তো বটেই, শহরেও অনেক সময় ডাক্তাররাও শিশুদের এই ডায়াবেটিস চিহ্নিত করতে দেরি করে ফেলেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

অনেক বাবা-মা মনে করেন ডায়াবেটিস শুধু বড়দের রোগ। ইনসুলিন ব্যবহারে সামাজিক লজ্জা বা ভয় কাজ করে।

ইনসুলিন সংরক্ষণ, ইনজেকশন দেওয়া এবং নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করা এখনো অনেক পরিবারে কঠিন ব্যাপার।

স্কুল-কলেজে ডায়াবেটিস শিশুদের জন্য কোনো বিশেষ সহায়তা নেই।

দরিদ্র পরিবারের শিশুরা প্রয়োজনীয় ইনসুলিন বা ডায়েট পায় না।

চিকিৎসা ও করণীয়

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে নিয়ম মেনে চললে শিশু একটি সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন কাটাতে পারে। প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি:

  • নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে রক্তে চিনি পরীক্ষা করা দরকার
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে
  • শরীরচর্চা করা দরকার (বয়স অনুযায়ী)
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন
  • বাবা-মা ও শিক্ষকের দায়িত্ব
  • শিশুর লক্ষণগুলো বুঝে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে
  • ইনসুলিন নেওয়া নিয়ে লজ্জা বা দ্বিধা দূর করতে হবে
  • স্কুলে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সচেতন করতে হবে যাতে শিশু চাপ বা অপমান বোধ না করে
  • পরিবারে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে

টাইপ ১ ডায়াবেটিস শিশুদের জীবনের এক নতুন চ্যালেঞ্জ হলেও মনে রাখা দরকার এটি মোটেও জীবন শেষ করে দেয় না। সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা ও পরিবার-পরিবেশের ভালোবাসা পেলে শিশুরাও টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিয়ে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে।