শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

জুমঃ করোনাকালের ‘লাইফ লাইন’ থেকে নিরাপত্তা ভঙ্গের ‘ভিলেন’

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

জুমঃ করোনাকালের ‘লাইফ লাইন’ থেকে নিরাপত্তা ভঙ্গের ‘ভিলেন’

করোনাভাইরাস মহামারির সময় বিশ্বে একটিই নাম ছিল মানুষের মুখে মুখে – ‘জুম’। ঘরে বসেই অফিস, ক্লাস, সভা কিংবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ; সবই চলছিল এই ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপের কল্যাণে।

বলা চলে, করোনাকালের ‘লাইফ লাইন’ হয়ে উঠেছিল জুম। অথচ মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই জনপ্রিয়তা আর আস্থা আজ প্রশ্নের মুখে। নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগে ‘ভিলেন’ এ পরিণত হয়ে নিজের জৌলুস হারাতে বসেছে জুম। বিনিয়োগকারীদের মামলার রায় আর প্রযুক্তি জগতের দানবদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার চাপে কোণঠাসা হয়ে কোনোমতে যেন টিকে আছে জুম।

জুমের শুরু 
২০১১ সালে চীনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেট হয়ে আসা এরিক ইউয়ানের হাতে জুমের জন্ম। তবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য ইউয়ানের ভিসার আবেদন আট বার বাতিল হয়। অবশেষে নবম দফায় দেশটির ভিসা পান ইউয়ান। জুমের আগে ‘ওয়েবেক্স’ তৈরিতে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সিসকো সিস্টেমস এটিকে কিনে নেয়। ওয়েবেক্স বর্তমানে জুমের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি। ২০১৩ সালে বাজারে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই ১০ লাখ ব্যবহারকারী পায় জুম। ২০১৪ সালের জুন নাগাদ ১ কোটি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী হয় জুমের। পরের বছরেই সেটি বেঁড়ে চার গুণ হয়।

এক মহামারিতেই নায়ক বনে যাওয়া
জুম ধীরে ধীরে বড় হলেও, ২০২০ সালের আগে তেমন কোন আলোচনায় ছিল না প্ল্যাটফর্মটি। তবে বাংলা প্রবাদ ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’ এর বাস্তব উদাহরণ যেন জুম। ২০২০ সালের করোনা মহামারীতে পুরো পৃথিবী যখন সর্বনাশের মুখে, তখন ফুলে ফেঁপে উঠছিল জুম ভিডিও কমিউনিকেশনস মালিকানাধীন ‘জুম’। ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো শেয়ার বাজারে এসে ৩৫৭ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করে জুম। এরপর মহামারির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জুমের ব্র্যান্ড ভ্যালু তথা বাজারমূল্য। স্কুল-কলেজ বন্ধ, অফিসের কাজ অনলাইনে - সবই যেন জুমকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। 

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তাদের শেয়ারের দাম প্রায় ৯০০ শতাংশ বেড়ে যায়, যা প্রযুক্তি খাতে নজিরবিহীন। ২০২০ সালের জুন মাসে জুমের সিইও এরিক ইউয়ান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য নতুন বাজার তৈরি করেছে। চাহিদার অভাব নেই, এবং এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আয়ের রেকর্ড গড়ছি।” সে বছরের অক্টোবরে জুমের প্রতি শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে ৫৬৮ ডলার হয়। ২০২০ সালে জুমের প্রতি শেয়ারের গড় মূল্য ছিল ২৬২ ডলারের উপরে। পরের বছর অর্থ্যাত ২০২১ সালে সেটি বেঁড়ে দাঁড়ায় ৩১৭ টাকায়। ২০২০ সালে জুমের মোট আয় ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে সেটি ৪ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জুমের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেলেও, ২০২২ সাল থেকেই নিজেদের বাজারদর হারাতে থাকে জুম। 

আর্থিক দরপতন
করোনাকালে ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া জুমের বাজারমূল্য ২০২২ সাল থেকে নি¤œমুখী হতে শুরু করে। ২০২১ সালে ৩১৭ ডলারে থাকা প্রতিটি শেয়ারের গড় মূল্য ২০২২ সালে ১০২ ডলারে নেমে আসে। এরপর ২০২৩ সালে ৬৮ ডলার এবং ২০২৪ সালে ৬৭ ডলারে এসে ঠেকে জুমের শেয়ার মূল্য। চলতি বছর জুমের প্রতিটি শেয়ারের গড় মূল্য চলছে ৭৭ ডলার। তবে খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৭০ ডলারে নেমে আসবে সেটি। তবে এখনও ইন্টারনেট সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির ২১ দশমিক ছয় নয় (২১.৬৯) বিলিয়ন ডলারের বাজার জুমের দখলে রয়েছে। 

নিরাপত্তা বিভ্রাটে আস্থার ভাঙন
জুমের উত্থানের পাশাপাশি এক ধরণের ঝুঁকিও ঘনিয়ে আসছিল। ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে একের পর এক বড় বড় সংস্থা জুম ব্যবহার বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। স্পেসএক্স, গুগল এবং এফবিআই সবাই একমত হয় যে, জুমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। ২০২০ সালের মার্চেই ইলন মাস্কের স্পেসএক্স তার ছয় হাজারের বেশি কর্মচারীকে মেইল পাঠিয়ে জুম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কারণ হিসেবে জানানো হয়, জুম ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ দাবির পরও আসলে সাধারণ ট্রান্সপোর্ট এনক্রিপশন ব্যবহার করছে, যা হ্যাকিংয়ের জন্য ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। একই সময়ে গবেষণা সংস্থা সিটিজেন ল্যাব একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, জুমের এনক্রিপশন সিস্টেম প্রযুক্তিগত মানদ-ে উত্তীর্ণ নয় এবং ভুল তথ্য প্রচার করছে।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক ম্যাথু গ্রিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “তারা ঠিকমতো জানাচ্ছে না কোন কোন অংশ আসলে এনক্রিপ্টেড। এমন আচরণ একধরনের অসততা। তারা যদি সোজাসুজি সত্যিটা বলত, সেটাই হতো সঠিক।”

‘জুমবম্বিং’ এবং গোপন তথ্য ফাঁস
এক সময় ‘জুম বম্বিং’ নামের একটি শব্দই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। এতে হ্যাকার বা অচেনা কেউ অনুপ্রবেশ করে জুম মিটিংয়ে অশ্লীল ছবি, হিংসাত্মক ভাষা বা অবাঞ্ছিত আচরণ করে বৈঠক বানচাল করে দিত। এমনকি সরকারি মিটিং ও অনলাইন ক্লাসেও এই ঘটনা ঘটেছে, যার পরিণতিতে এফবিআই পর্যন্ত ২০২০ সালের মার্চে সতর্কতা জারি করে। এছাড়া অভিযোগ ছিল, জুম ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকসহ তৃতীয় পক্ষের কাছে শেয়ার করেছে, যা আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের সামিল।

বিনিয়োগকারীদের মামলা এবং ১৫০ মিলিয়ন ডলারের মীমাংসা
এই সব কেলেঙ্কারির পর, জুমের বিরুদ্ধে একটি শ্রেণিগত মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ ছিল, বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে ভুল তথ্য দিয়ে শেয়ারদর বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ থাকলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে, দীর্ঘ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জুম ১৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি কখনোই দোষ স্বীকার করেনি, বরং জানায়, তারা সবসময় ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতেই কাজ করেছে।

নিরাপত্তা আপডেট এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই
সমালোচনার প্রেক্ষিতে জুম বেশ কিছু নিরাপত্তা ফিচার চালু করে। মিটিংয়ে পাসওয়ার্ড বাধ্যতামূলক, ওয়েটিং রুম ফিচার চালু এবং হোস্ট কন্ট্রোল শক্তিশালী করা হয়। এরপরও অনেক ব্যবহারকারী এবং প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট টিমস ও গুগল মিট-এর মতো বিকল্প প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়। জুম এখন এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আছে, যখন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের সচেতনতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ফলে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নই শুধু যথেষ্ট নয়—প্রতিষ্ঠানটির দরকার আস্থা পুনর্গঠন।

বাজারে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি
করোনার শুরুতে অনলাইন মিটিং কেন্দ্রিক সফটওয়্যারের বাজার জুম একচেটিয়া অর্জন করলেও, এই সুবিধা বেশিদিন ভোগ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। দ্রুতই বাজারে জুমের বিকল্প সমাধান নিয়ে আসতে থাকে গুগল, সিসকো, মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টরা। গুগলের মিট, সিসকোর ওয়েবেক্স, মাইক্রোসটের টিমস এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহারকারী দিন দিন বাড়ছে। শক্তিশালী এই প্রতিদ্বন্দ্বিদের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে জুমের পরবর্তী কৌশলের ওপরই নির্ভর করছে প্ল্যাটফর্মটির ভবিষ্যৎ। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!