এখন অহরহ ঢাকার রাস্তায় দেখা যাচ্ছে স্কুটার ছেলে মেয়ে বয়স্ক সবায় চালাছে স্কুটার। একদিকে যেমন জ্যাম পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় ঠিক তেমন হর্নের শব্দ নেই, ধোঁয়া নেই, শুধু নরম গুঞ্জন। চালকের কোনো চিন্তা নেই, কারণ পেট্রোলের দাম তার মাথাব্যথা নয়। এটি বাংলাদেশের নতুন পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবিÑইলেকট্রিক যানবাহনের যুগের সূচনা।
পরিবর্তনের হাওয়া
এক দশক আগেও যেখানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে ‘গ্রামীণ যাতায়াতের বাহন’ বলা হতো, এখন সেই ধারণা বদলে যাচ্ছে। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা শহরÑসবখানেই এখন দেখা যাচ্ছে ইলেকট্রিক মোটরবাইক, স্কুটার, এমনকি প্রাইভেট কারও।
ইণউ, গএ, ঐুঁহফধর, এবং কিছু দেশীয় ব্র্যান্ড বাজারে ইলেকট্রিক মডেল আনছে। সরকারের লক্ষ্যও সুস্পষ্টÑ২০৪১ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ যানবাহন ইলেকট্রিক করা।
অর্থনীতি থেকে পরিবেশ সবার লাভ
বাংলাদেশ প্রতিবছর তেল আমদানিতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার করলে সেই নির্ভরতা অনেক কমে যাবে। একটি ইলেকট্রিক বাইক দিনে মাত্র ১৫-২০ টাকা বিদ্যুতে চার্জ হয়Ñযেখানে পেট্রোলের খরচ হতো ১৫০ টাকারও বেশি!
এতে শুধু চালকের খরচই কমছে না, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ও হচ্ছে। অন্যদিকে, ইলেকট্রিক গাড়ি ধোঁয়ামুক্ত ও প্রায় নিঃশব্দ, ফলে শহরের বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ দুই-ই কমবে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর।
নতুন কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তির প্রসার
ইলেকট্রিক গাড়ির বাজার প্রসারিত হওয়ায় নতুন চার্জিং স্টেশন, ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র, ও সার্ভিস ওয়ার্কশপ গড়ে উঠছে। এতে তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান, বিশেষ করে তরুণ ও প্রযুক্তি-দক্ষদের জন্য। একইসঙ্গে ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রসার টেকনিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
চ্যালেঞ্জও কম নয়
তবে পথটি একেবারে মসৃণ নয়। এখনো দেশের অনেক জায়গায় চার্জিং অবকাঠামো নেই, ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট ব্যয়বহুল, আর অনেকেই প্রযুক্তি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখেন না।
সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে যদি চার্জিং নেটওয়ার্ক ও টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ বাড়ায়, তবে এই খাত আরও গতি পাবে।
ভবিষ্যতের আশা
বিশ্ব যখন কার্বনমুক্ত পরিবহনের দিকে এগোচ্ছে, বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার শুধু আধুনিকতার প্রতীক নয়Ñএটি পরিবেশ রক্ষা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।
যেদিন ঢাকা শহরের রাস্তায় একসঙ্গে হাজার ইলেকট্রিক গাড়ি নিঃশব্দে চলবে, সেদিনই শুরু হবে প্রকৃত ‘সবুজ বিপ্লবের’ নতুন অধ্যায়।
পরিশেষে
ইলেকট্রিক যানবাহন শুধু গাড়ি নয়Ñএটি একটি দর্শন, একটি পরিবর্তনের গল্প। বাংলাদেশ এখন সেই গল্পের প্রথম অধ্যায়েÑআগামী অধ্যায় আরও উজ্জ্বল হবে, যদি আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাই ‘সবুজ গতির’ পথে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন