ঢাকায় বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। কেজিতে বেড়েছে অন্তত চার টাকা। ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি আলু ও ডালের দামও কিছুটা বেড়েছে। দাম বাড়ার পেছনে চাল উৎপাদনকারী মিলার ও করপোরেট কোম্পানিগুলোর দিকে আঙুল তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহের মতো ৪০-৬০ টাকার মধ্যে ঢাকায় মিলছে অধিকাংশ সবজি। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও মাংস ও মাছের দাম আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
তবে ঈদের আগে চালের দাম কমেছিল কেজিতে অন্তত ৭ টাকা। ঈদের পরে সরবরাহ ঠিক থাকলেও হঠাৎ দাম বেড়েছে বলে জানান ক্রেতা ও বিক্রেতারা। চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্তের ভোক্তারা।
চালের দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে দেশের করপোরেট কোম্পানিগুলো। তারা মৌসুমে ধান কিনে মজুত করেছে এবং এখন বেশি দামে সরবরাহ করছে। তাদের সঙ্গে মিলাররা রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী।
তারা বলেন, মিলগেটেই বিআর-২৮ চাল ২৫ কেজির (কেজি ৫৬ টাকা) বস্তা ১৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
তবে দেশের বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ ও দিনাজপুরেও দাম বেড়েছে। গত ১৫ দিনে পাইকারিতে চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। আর খুচরায় বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ।
চালের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রয়েছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী বেলাল আহমেদ। তিনি বলেন, বিআর-২৮ চাল সাধারণ মানুষের খাবার। সেই চাল মিলগেটে ৫৬ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে, যে দরে আগে আমরা এখানে চাল বিক্রি করেছি।
চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক হিসেবে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘কার্তিকের মধ্যবর্তী সময়ে সব ধরনের ধান-চালের মুজত শেষ হয়।
এ সময় বাইরে বোরো ধানের চাল রাখা যায় না, পোকায় ধরে নষ্ট হয়। নতুন করে বোরোর চাল বাজারে আসায় প্রথমে দাম কমেছিল, এখন বাড়তির দিকে।’
করপোরেট কোম্পানিগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মৌসুমে ধান কিনে চাল করে মিলারদের কাছে রাখছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। তাদের নানান ব্যবসা, নতুন করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের কৌশল করছে কোম্পানিগুলো। এটা সরকারকে এখনই দেখা দরকার। না হলে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।’
কিচেন মার্কেটের আরেক চাল ব্যবসায়ী নুুর মোহাম্মদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নাজিরশাইল চাল কয়েক প্রকারের আছে। ঈদের পরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। আমরা মিলগেট রেট থেকে মাত্র ২ টাকা বেশি দরে বিক্রি করি।’
মিলারদের সম্পর্কে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রূপালী ইন্ডাস্ট্রিজের শীর্ষ এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কৃষকের কাছে আর ধান নেই। মৌসুমেই বেশি দামে কিনেছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। ধান কিছু আছে মিলারদের কাছে, তারা ধীরে বাজার বুঝে এসব ছাড়ছেন। তবে চালের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন কাজ করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো।’
ঢাকার মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে গতকাল দেখা গেছে, আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি ছোট আলুর দাম আরও বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
কিচেন মার্কেটের ডিম ব্যবসায়ী মো. স্বপন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঈদের পরে ডিমের দাম বাড়েনি। প্রতি ডজন ডিমের দাম ১১০ টাকা। প্রতি পিস ৯.১৬ টাকা।’
অন্যদিকে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে, দুই সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল সর্বোচ্চ ৫০-৫৫ টাকা কেজি। বর্ষায় আরও দাম বাড়তে পারে বলে আভাস দেন মগবাজারের রাজ্জাক স্টোরের মালিক মেহেদী হাসান।
কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। তার মধ্যে পটোল প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা, গোল বেগুন ৭০-৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৪০-৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বরবটি ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, টমেটো ও করলা ৬০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০-৫০ টাকা এবং কাঁচামরিচের কেজি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী অনেকে বলেন, বর্ষায় সরবরাহ কম এবং সবজির মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। তাই সরবরাহ ঘাটতি, নতুন কোনো সবজির সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে। তবে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকায় সয়াবিন তেলের দাম এখনো বাড়েনি।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে দেখো যায়, প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                    -20251031020255.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
       -20251031160223.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন