গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গতকাল বৃহস্পতিবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে এ কথা বলা হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়, ১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়; যার উদ্দেশ্য ছিল এই দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগপন্থিরা পুরোনো এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এই দিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েক ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ ও বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।
একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার উল্লেখ করে দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে ছবিটি ১০ আগস্ট, ২০২৪ সালের একটি ভিন্ন ঘটনার।
আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তারা উল্লেখ করেনÑ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। তবে ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে এই ছবিও ভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে প্রেস উইং দাবি করে, ছবিটি ২০ মার্চ ২০২৩ সালে এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।
একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়, যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছেন।
তবে শিশুর এই ছবি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছিল।
এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি আওয়ামী লীগপন্থি অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে, এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।
গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বুধবার রাত ৮টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :