রাজধানীর আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে সালিশে বাগবিত-ার একপর্যায়ে ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করে মো. ইব্রাহিম শিকদার (৩৮) নামের একজনকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ায় বাসা থেকে ডেকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) আল আমিনকে (৩৮)। দুটি হত্যাকা- সংঘটিত হয় এক ঘণ্টার ব্যবধানে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় গুলি করে হত্যা এবং হত্যাকারীকে উপস্থিত লোকজনের মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, সাদা টি-শার্ট, নেভি ব্লু জিনস প্যান্ট পরা ও কাঁধে কালো ব্যাগ ঝোলানো এক ব্যক্তির সঙ্গে আরেকজন এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ টি-শার্ট ও জিনস পরা ওই ব্যক্তি কালো ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে এক ব্যক্তিকে গুলি করেন। মুহূর্তের মধ্যে তিনি লুটিয়ে পড়েন। এরপর কয়েকজন হামলাকারীকে কলার ধরে ঘুষি মারতে থাকেন। পরে ঘাতক ও সঙ্গে থাকা তার ভাইকে পুলিশে দেয় জনতা। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম মো. ইব্রাহিম শিকদার। তিনি পেশায় গাড়িচালক। গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আদাবরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটির বায়তুল মামুর জামে মসজিদের সামনে তাকে গুলি করা হয়।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার পরই গুলি করা সজীব (৩২) ও তার ভাই রুবেলকে (৩৫) আটক করে মারধর করে। পুলিশ দুই ভাইকে উদ্ধার করে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। এই দুই ভাইয়ের কাছ থেকে তিনটি গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে।
মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের বড় ভাই কবির হোসেন শিকদার বলেন, ইব্রাহিম তার স্ত্রী লাইজু আক্তার ও তিন বছর বয়সি ছেলেকে নিয়ে নবোদয় হাউজিংয়ের একটি ভবনে ভাড়া থাকতেন। তাদের ভাগনে সুজন শিকদার আদাবর ১৬ নম্বর সড়কসংলগ্ন কাঁচাবাজারে ডিম ব্যবসায়ী সজীবের দোকানে কাজ করতেন। কয়েক দিন আগে সুজন ভ্যানে ডিম নিয়ে আসার সময় কিছু ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সজীব সুজনকে মারধর করেন। ওই ঘটনা নিয়ে গত বুধবার সন্ধ্যার পর নবোদয় হাউজিংয়ে বায়তুল মামুর মসজিদের কাছে একটি দোকানে সুজন ও রুবেলের সঙ্গে সালিশ বৈঠকে বসেন ইব্রাহিম ও তার স্বজনেরা। সালিশের মধ্যে সজীব উত্তেজিত হয়ে ইব্রাহিমের গালে চড় মারেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে সজীব ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে ইব্রাহিমকে গুলি ছুড়লে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর মধ্যে সজীব ও তার ভাই রুবেল সালিশ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গেলে ইব্রাহিম ও তার স্বজনেরা সজীবকে সালিশ শেষ করতে বলেন। একপর্যায়ে সজীব ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে খুব কাছ থেকে ইব্রাহিমকে গুলি করেন।
ডিসি ইবনে মিজান বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মারধরে সজীব ও রুবেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সুস্থ হলে তাদের রিমান্ডে নিয়ে পিস্তলের মালিকানা ও উৎস সম্পর্কে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতিমধ্যে তাদের আদালতে তোলা হয়েছে। সজীব ও রুবেলের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মুজাহার্দিতে। সজীব ঢাকার অদূরে সাভার ও রুবেল আদাবরে থাকেন। নিহত ইব্রাহিমের বাড়ি ভোলা জেলার দুলারহাট থানার মুজিবনগরে। তার স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বিনা দোষে সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে চিরতরে শেষ করে দিল। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিন বছরের সন্তান নিয়ে আমি কোথায় যাব, কীভাবে ওদের বড় করব?
পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ায় খুন: গত বুধবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে ডেকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) আল আমিনকে (৩৮)। তিনি সপরিবারে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, সম্প্রতি আল আমিন ছিনতাই মামলার আসামি এক সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেন। এতে ওই সন্ত্রাসীর বড় ভাই জোবায়েরের নেতৃত্বে আল আমিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত আল আমিনের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।
তবে তার ছোট ভাই আবির দাবি করেন, তার বড় ভাই আল আমিন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। কিশোর গ্যাং এবি গ্রুপের নেতা সাদ তার দলে ঢুকতে আল আমিনকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় সাদের বন্ধু শাওন ও তার সহযোগীরা তার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আল আমিনের বাড়ি শরীয়তপুরের সদর উপজেলার হাঁটুরিয়ায়। তার বাবা রিপন সরদার পেশায় গাড়িচালক।
আপনার মতামত লিখুন :