ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে একটি হোস্টেল ভবনে বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইনডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। সেই ফ্লাইটের ২৩০ যাত্রীর মধ্যে ২২৯ জন এবং ১২ জন ক্রুর সবাই নিহত হন। এ ছাড়াও হোস্টেলের আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়। গত সপ্তাহে ভারতীয় তদন্তকারীদের দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনেও বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণের সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ পজিশনে চলে যাওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে এর জন্য পাইলটদের দায়ী করা হয়নি। সুইচের এ অবস্থান বদল ইচ্ছাকৃত নাকি দুর্ঘটনাবশত হয়েছে, সে সম্বন্ধেও প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।
তবে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হওয়ার পেছনে ‘মূলত জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করাই’ দায়ী ছিল এবং প্রধান পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়ালই ওই কা- ঘটান বলে মার্কিন তদন্তকারীদের ধারণা। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটির ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে শেষ মুহূর্তের কথোপকথনের সূত্র ধরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আতঙ্কিত সহকারী পাইলট সবরওয়ালকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন তিনি জ্বালানি নিয়ন্ত্রণের সুইচ ‘কাট-অফ’ পজিশনে নিয়ে গেলেন। ক্যাপ্টেন তখন বলেন, তিনি কিছু করেননি। যদিও ওই আলাপের সময় সবরওয়াল ছিলেন অনেকটাই শান্ত।
ভারতের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরোর (এএআইবি) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক পাইলট অন্যজনের কাছে কেন তিনি সুইচ বদলে দিয়েছেন, তা জানতে চান। উত্তরে অপর পাইলট বলেন, তিনি এমন কিছু করেননি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন পড়া মার্কিন পাইলটরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় ৩২ বছর বয়সি সহকারী পাইলট ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডেরের হাতেই উড়োজাহাজটির কন্ট্রোল বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৫৬ বছর বয়সি সবরওয়ালের হাত সম্ভবত খালিই ছিল, কারণ তিনি ছিলেন মনিটরিং পাইলট, যার কাজ ছিল নজর রাখা। হাত খালি থাকায় ক্যাপ্টেনের পক্ষেই জ্বালানির সুইচ নাড়াচাড়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল বলে মার্কিন তদন্তকারীরা ধারণা করছেন।
এদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলছে, জ্বালানি নিয়ন্ত্রণের সুইচগুলো এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে যায়, ১০ সেকেন্ড পর আবার চালু হয়। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক প্রেস কর্মকর্তা ও এএআইবি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এ প্রতিবেদনকে একপেশে অভিহিত করেছে। তারা এ নিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হয়নি। দেশটির কমার্শিয়াল পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ‘চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে ক্রুরা তাদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করেছেন, কল্পনাভিত্তিক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে পাইলটদের ওপর দোষ চাপানো উচিত নয়। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া স্রেফ অনুমানের ভিত্তিতে পাইলটের আত্মহত্যার ইঙ্গিত, সাংবাদিকতার নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন এবং পেশাটির মর্যাদার প্রতি চরম অসম্মান।
আপনার মতামত লিখুন :