বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০১:২৭ এএম

প্লাস্টিক ‘মহামারি’র দাওয়াই নেই যেন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০১:২৭ এএম

প্লাস্টিক ‘মহামারি’র দাওয়াই নেই যেন

  • প্লাস্টিক-দূষণে স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার।
  • ১৯৫০ সাল থেকে এর উৎপাদন ২০০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি। ২০৬০ সালের মধ্যে তিন গুণ বাড়বে।
  • বিশ্বজুড়ে শতাধিক দেশ প্লাস্টিক উৎপাদনে সীমা আরোপের পক্ষে 
  • প্লাস্টিকে ১৬ হাজারের বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়

বর্তমানে বিশ^জুড়ে প্লাস্টিক-দূষণ মহামারির আকার ধারণ করেছে যেন। কয়েক বছর আগেই বিশ^ করোনা ভাইরাসের মতো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। যে লড়াই এখনো চলছে। কিন্তু প্লাস্টিক-দূষণের কারণে রোগবালাই ও পরিবেশের ক্ষতি যেভাবে বাড়ছে, তা আর্থিক দিক বিবেচনায় কয়েক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।


প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ৩০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক-দূষণে মানব স্বাস্থ্যে বার্ষিক ক্ষতির অঙ্ক ছাড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে শুরু করে প্লাস্টিকে আচ্ছাদিত সৈকত দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ থেকে হিমালয় পর্বতের চূড়া, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তেই মিলছে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব। 


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৫০ সালের পর প্লাস্টিক-দূষণ বেড়েছে ২০০ গুণ। ২০৬০ সালের মধ্যে এই দূষণ আরও দিগুণ বেশি হবে। প্লাস্টিক পৃথিবীর পরিবেশ ও মানবজাতির স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমাগত এক বড় ধরনের বিপদ হয়ে উঠছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সিদের বিভিন্ন রোগ ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এটি। প্রতি বছর এর মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। 


ল্যানসেটের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রায় ৯৯ শতাংশ প্লাস্টিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন তেল, গ্যাস কিংবা কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি। তাই উৎপাদন কমানোর পরিবর্তে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দিচ্ছে জ্বালানি উৎপাদক দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল মঙ্গলবার হয়েছে ইন্টার গভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটির ১০ দিনের কনফারেন্স। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, কঠোর বিধিনিষেধ ছাড়াই প্লাস্টিক-দূষণ রোধে হতে পারে বৈশ্বিক চুক্তি। এমন পরিস্থিতিতে ধরিত্রী রক্ষায় বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফার আলোচনায় জাতিসংঘের উদ্যোগে এ কনফারেন্সে অংশ নিয়েছে ১৭০টিরও বেশি দেশ। যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলো প্লাস্টিকের উৎপাদন কমানোর পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দিচ্ছে। তবে সৌদি আরব, কাতার, ইরান ও রাশিয়ার মতো জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশগুলো কেবল প্লাস্টিকের বর্জ্য কমানোর পক্ষে। 


যদিও প্লাস্টিকের অনেক দরকারি ব্যবহার আছে, তবু সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। যেমন পানির বোতল ও ফাস্টফুডের প্যাকেট। ফলে দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে আট বিলিয়ন টন প্লাস্টিক পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছেÑ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীর সমুদ্রের তলা পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ, মহামারিবিদ এবং এই প্রতিবেদনের প্রধান লেখক অধ্যাপক ফিলিপ ল্যান্ড্রিগান বলেন, ‘আমরা জানি, প্লাস্টিক-দূষণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব কতটা বিস্তৃত ও গুরুতর।’


গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভের শিশু, নবজাতক ও ছোট শিশুদের ওপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ে। প্লাস্টিকের প্রভাবে গর্ভপাত, অপরিণত ও মৃত শিশুর জন্ম, জন্মগত ত্রুটি, ফুসফুসের বিকাশে সমস্যা, প্রজনন ক্ষমতাজনিত সমস্যা এবং শিশু বয়সে ক্যানসারের মতো জটিলতা হতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্য অনেক সময় ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়, যা পানি, খাবার ও প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে যায়। মানুষের রক্ত, মস্তিষ্ক, মায়ের বুকের দুধ, গর্ভফুল, শুক্রাণু ও অস্থিমজ্জায় এ ধরনের প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।


ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি কাজেই প্লাস্টিক মানুষ ও পৃথিবীকে বিপদে ফেলছে। এসব প্লাস্টিকের মাত্র ১০ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলা যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাশন থেকে শুরু করে উৎপাদন, ব্যবহার এবং পরবর্তী নিষ্কাশন পর্যন্ত এই প্লাস্টিক বায়ুকে দূষিত করছে। এতে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে দূষিত রাসায়নিক, যা আমাদের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক হিসেবে প্রবেশ করছে। এই প্লাস্টিকের কারণে হতে পারে মশাবাহিত রোগ। কেননা, প্লাস্টিকে থাকা পানি জমে থাকলে তাতে দ্রুত মশার জন্ম হতে পারে। 


ল্যানসেট বলছে, প্লাস্টিকে ১৬ হাজারের বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ফিলার, রঞ্জক, অগ্নি প্রতিরোধক ও স্থিতিশীলকারী। মানবজীবনের সর্বপর্যায়ে অনেক প্লাস্টিকের রাসায়নিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত। তবে প্লাস্টিকের কোন রাসায়নিকগুলো আমাদের বেশি ক্ষতি করে, সে সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। 


এ নিয়ে আমেরিকার বোস্টন কলেজের অধ্যাপক ও মহামারি বিশারদ ফিলিপ ল্যান্ডিগ্রান গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘প্লাস্টিক-দূষণের স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে আমরা সবাই জানি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ওপর এই প্রভাব বেশি। বিশেষ করে শিশু ও ভ্রƒণের ওপর। এর ফলাফল হচ্ছে, আর্থিকভাবে বেশ বড় একটা ব্যয়। এই সংকট সমাধানে কাজ করা এখন অত্যাবশক।’


প্লাস্টিক এবং এ-সংক্রান্ত জিনিস বানানো প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আগে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার দিকে এগোতে হবে, উৎপাদন কমানো যাবে না। কিন্তু রাসায়নিকভাবে বানানো প্লাস্টিক কাগজ, কাচ, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো দ্রুত পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করা যাবে না।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!