সুদূর ওমান থেকে প্রিয়জনদের বুকে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন মো. বাহার উদ্দিন। প্রায় আড়াই বছর পর দেশে ফেরা সেই মুহূর্তের আবেগ ধরে রাখতে ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই রূপ নেয় চরম দুঃস্বপ্নে। দেশে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বাহার উদ্দিনের মা, স্ত্রী, শিশুকন্যা ও আরও চার স্বজন।
গতকাল বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর এলাকায় চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, বাহার উদ্দিনের স্ত্রী কবিতা (২৪), দুই বছরের কন্যা মীম, মা মোরশিদা বেগম (৫৫), নানী ফয়েজ্জুনেছা (৮০), ভাবি লাবনী বেগম (৩০), ভাতিজি রেশমি আক্তার (৮) ও লামিয়া আক্তার (৯)। তারা সবাই একটি মাইক্রোবাসে করে বিমানবন্দর থেকে বাহার উদ্দিনকে বাড়ি নিয়ে আসছিলেন।
দুর্ঘটনার সময় মাইক্রোবাসটিতে মোট ১৩ জন ছিলেন। ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে দ্রুতগতির মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। চালক পানিতে পড়ে গিয়ে পালিয়ে যায়। বাহার উদ্দিনসহ পাঁচজন জানালার গ্লাস ভেঙে বেরিয়ে আসলেও সাতজন গাড়ির ভেতরেই আটকা পড়ে। দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে একে একে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করেন।
দুর্ঘটনার আগে বাহার উদ্দিন তার ফেসবুক প্রোফাইলে আবেগঘন একটি পোস্ট দেন, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’। সেই পোস্টের নিচেই দুর্ঘটনার পর একজন ছবি কমেন্ট করে দিয়েছেন, যেখানে দেখা যায়, বাহার উদ্দিন একটি সাদা ব্যাগে মোড়ানো মরদেহের দিকে তাকিয়ে আছেন, শূন্য চোখে, নিথর দৃষ্টিতে।
বাহার উদ্দিনের বাবা আব্দুর রহীম বলেন, ‘চালক বারবার ঝিমাচ্ছিল। আমরা বলছিলাম, গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিশ্রাম নাও। সে বলছিল, না, সমস্যা নেই। ঘুম থেকে হঠাৎ সজাগ হয়ে আবার গাড়ি চালাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাবাজারের পর গাড়িটি খালে ফেলে দেয়।’
তিনি জানান, গাড়িতে থাকা ১৩ জনের মধ্যে তিনি, ছেলে বাহার, আরেক ছেলে ও একজন নাতনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। বাকিরা কেউ আর বেঁচে নেই।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘চালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। মরদেহগুলো উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। চালক পলাতক রয়েছে।’
এ ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চোখের জল থামছেই না পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের। সবাই বলছেন, একজন প্রবাসীর ঘরে ফেরা এতটা হৃদয়বিদারক হতে পারে, তা ভাবতে পারেননি কেউই।