ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন ঘাঁটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম
ছবি- সংগৃহীত

রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের কামচাটকা উপ-দ্বীপে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা রাইবাচি পারমাণবিক সাবমেরিন ঘাঁটি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্ল্যানেট ল্যাবসের স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ঘাঁটির কিছু অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি কিছু কাঠামো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে কামচাটকার কাছে আঘাত হানা ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল রাইবাচি ঘাঁটি থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে হলেও, ঘাঁটির অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য ও সংবেদনশীলতা একে বিপদের মুখে ফেলে দেয়।

রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের অংশ এই ঘাঁটি পারমাণবিক সাবমেরিনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্যাটেলাইট ছবিতে ঘাঁটির পাশে অন্তত পাঁচটি পারমাণবিক সাবমেরিন ও কয়েকটি নৌযানকে নোঙর অবস্থায় দেখা গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা এখনো স্পষ্ট নয়।

রাশিয়ার সরকার কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। একইভাবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোও এখনো পর্যন্ত ঘাঁটির আশপাশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির কোনো তথ্য দেয়নি, যা কিছুটা আশ্বস্ত করছে।

সোভিয়েত আমলে নির্মিত রাইবাচি ঘাঁটিটি স্থাপন করা হয়েছিল একটি প্রাকৃতিক খাদে, যাতে খোলা সমুদ্রের ঢেউ ও ঝড় থেকে সাবমেরিন ও নৌযানগুলো সুরক্ষিত থাকে। তবে ভূমিকম্প ও সুনামির ঢেউয়ের মতো দুর্যোগে এই অবস্থান বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

জানা গেছে, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ঘাঁটিতে নতুন ভাসমান স্তম্ভ যুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্তত দুটি স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে। কিছু পুরনো কাঠামো অক্ষত থাকলেও, বেশ কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত সপ্তাহে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। যদিও বড় ঢেউ মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়েনি, তবে খোলা সমুদ্রে বিশাল ঢেউ দেখা গেছে, যা রাইবাচি ঘাঁটির মতো উপকূলবর্তী স্থাপনাগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

রাইবাচি ও তার আশপাশের এলাকা একটি উচ্চ-নিরাপত্তা সংরক্ষিত অঞ্চল, যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফলে ভূমিকম্পে বাস্তবিক ক্ষয়ক্ষতি ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে নিরপেক্ষ তথ্য পাওয়া কঠিন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পারমাণবিক ঘাঁটিতে আঘাত লাগা এবং এর আশপাশে তেজস্ক্রিয়তা না থাকা ইতিবাচক দিক হলেও, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও উদ্বেগজনক। কারণ, কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটলে তা হতে পারতো বিপর্যয়কর।