জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত ৬ জনের মরদেহ দীর্ঘ এক বছর পর বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশগুলো রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ১ বছরেও তাদের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে লাশগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মর্গে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন, রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মুনসুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে মরদেহ বুঝে নেন দাফন সেবা কর্মকর্তা মো. কামরুল আহমেদ।
ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর বলেন, গত বছর ৭ থেকে ১৪ আগস্ট এই ৬টি লাশ মর্গে আনা হয়েছিল। এরপর লাশগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। অজ্ঞাতনামা থাকায় তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে এরপরও লাশের কোনো পরিচয় শনাক্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ১টি মরদেহে গানশট ইনজুরি রয়েছে। আর বাকি ৫টিতে বোথা অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন বলেন, লাশের ডিএনএ ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমেও তাদের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি। এ জন্য আদালতের নির্দেশে লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হচ্ছে। তবে লাশের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যদি কেউ লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারে ও তাদের স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, মরদেহগুলো শনাক্ত করা যায়নি। আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের হাতের অবস্থা খারাপ থাকায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে তাদের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দাফন সেবা অফিসার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, দাফনের উদ্দেশ্যে জুরাইন কবরস্থানে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ছয়টি মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত ছয়টি মরদেহের মধ্যে তিনটি যাত্রাবাড়ী থানার, একটি পল্টন থানার ও দুইটি শাহবাগ থানার। মরদেহগুলোর ডিএনএ সংরক্ষণ করা রয়েছে, যেন ভবিষ্যতে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
এদিকে, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪-এর ১৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিল ২০, ২২, ২৫ বছর বয়সি ৩ যুবকের লাশ। একই দিন ৩০ বছর বয়সি এক যুবক ও ৩২ বছর বয়সি এক নারীর লাশ আনা হয়। তবে তারা কোন এলাকায় মারা গিয়েছিলেন তা অজানা। এর আগে ৭ আগস্ট গুলিস্তান থেকে আনা হয়েছিল ২৫ বছর বয়সি এক যুবকের লাশ। সেই সময় সবগুলো লাশেরই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে শাহবাগ থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। তবে কিছুতেই জানা যায়নি তাদের পরিচয়। বেওয়ারিশ লাশগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয় হিমঘরে।
আপনার মতামত লিখুন :