শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:৫১ এএম

মীরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ

সাবেক এমপি ইলিয়াস মোল্লার কথায় চলত গোটা প্রতিষ্ঠান

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:৫১ এএম

সাবেক এমপি ইলিয়াস মোল্লার কথায় চলত গোটা প্রতিষ্ঠান

রাজধানীর পল্লবীর ঐতিহ্যবাহী মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব প্রায় দেড় যুগ অনেকটা স্বৈরাচারী কায়দায় আঁকড়ে রাখেন দলটির ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি ইলিয়াস হোসেন মোল্লা। এরমধ্যে ৯ বছরই গায়ের জোরে সভাপতি ছিলেন তিনি। সরকারি আইনে একসময় প্রত্যক্ষভাবে তিনি পদ ছাড়লেও নেতৃত্বে বসান তার স্ত্রী ফরিদা ইলিয়াসকে। এই দীর্ঘ সময়ে কমিটিতে থাকা অন্যান্য সদসর‌্যাও ছিলেন তার অনুগত।

এসব কমিটি করতে নেওয়া হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন। ইলিয়াস মোল্লার ক্ষমতায় কার্যক্রম চালিয়েছে এসব কমিটি। কমিটিগুলো অধ্যক্ষ পদে একাধিকজনকে অবৈধভাবে নিয়োগের পাশাপাশি অনেক শিক্ষককেও একই কায়দায় নিয়োগ দিয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর- ডিআইএ’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চিত্র। প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

সূত্র জানায়, নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের মার্চ মাসে ডিআইএ’র তিন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির নানা বিষয়ে তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে সম্প্রতি প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। ডিআইএ’র যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর খন্দকার মাহফুজুল আলম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। 

গায়ের জোরে বিদ্যালয় পরিচালনা 
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি ইলিয়াস হোসেন মোল্লা। ঢাকা-১৬ আসনের এই সাবেক সংসদ সদস্যকে ২০০৯ সালে এডহক কমিটির আহ্বায়ক করে ছয় মাস মেয়াদে দুইবার প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এরপর ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি বোর্ড কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এক প্রকার গায়ের জোরেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ স্কুল ও কলেজ পরিচালনা কমিটিতে থাকতে পারবেন নাÑ এমন নির্দেশ দিলে তিনি প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে গায়ের জোরে নেতৃত্বে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী ফরিদা ইলিয়াসকে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্তই ইলিয়াস মোল্লার অনুসারীরাই প্রতিষ্ঠানটি এডহক কিংবা পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া কাগজ তৈরি করে অভিভাবক সদস্য করা হয়েছিল আব্দুস সালাম ও আকলিমা বেগম নামের দুজনকেÑ যাদের সন্তান এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীই ছিলেন না। মাউশি কিংবা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ইলিয়াস মোল্লার অনুমোদনে অবৈধভাবে চলত সব কমিটির কার্যক্রম।

অবৈধভাবে একাধিক অধ্যক্ষ নিয়োগ
শুধু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অবৈধ নয়, প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকের নিয়োগও ছিল অবৈধ। ডিআইএ’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাস্টার্সের সনদ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন বদর উদ্দিন হাওলাদার। তার নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়। ফলে অনিয়মের দায়ে তাকে এক মাসের সাজাও দেন আদালত। পরে ২০১৭ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক এ বি এম আব্দুছ ছালামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর ডিআইএ’র প্রতিবেদনে উঠে আসে আব্দুছ ছালামের নিয়োগও অবৈধ। তার বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে মোস্তফা কামাল খোশনবীস নামের আরেক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক নিয়ে নিয়োগ দেয় কমিটি। কিন্তু সেই কমিটি গঠনই অবৈধ প্রক্রিয়ায় হওয়ায় খোসনবীসের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে পুনরায় তাকে নিয়োগ দেয় কমিটি। 

বিদ্যালয় পরিচালনায় থাকা এসব অবৈধ কমিটির অধীনে আরও ৬৩ শিক্ষক ও একজন সহকারী গ্রন্থাগারিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগও অবৈধ মনে করছে ডিআইএ’র তদন্ত কমিটি। তবে এ নিয়ে রিট পিটিশন খারিজ হওয়ায় এসব শিক্ষকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছে তদন্ত কমিটি। 
দোকান ভাড়ার কোটি টাকার হিসাবে নয়ছয় পল্লবীর নামকরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জমিতে রয়েছে ১৭টি দোকান ঘর। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব দোকান থেকে ভাড়া আদায় হয়েছে এক কোটি ৪২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৪ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করার কথা থাকলেও ভাড়া নেওয়া হয় রশিদের মাধ্যমে। কিন্তু এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব না অন্য কোথায় জমা হয়েছে এমন তথ্য তদন্ত কমিটিকে নিশ্চিত করতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীস। তদন্ত কমিটি ব্যাংক হিসেবে চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও ওই ভাড়ার ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ১২৬ টাকাও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। আয়কর জমার পাশাপাশি ভাড়ার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার রশিদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ডিআইএ’র এই কমিটি। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো বিভিন্ন কাগজ বিক্রির ৫১ হাজার ছয়শ টাকাও ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়নি বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই টাকা জমা দেওয়ার রশিদ জমা না দিলে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছে কমিটি। 

এর বাইরে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পাঠদানের জন্য দুই কোটি টাকা সম্মানির আয়কর পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৩৮৯ টাকা, পরীক্ষা কক্ষ পর্যবেক্ষকের সম্মানি থেকে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪০ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলেছে কমিটি। 
দখলে নেই ৫ কোটি টাকার জমি

২০১২ সালে মীরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য পাশর্^বর্তী ১২ শতাংশ জমি ১৫ কোটি টাকা দামে কেনার জন্য বায়নানামা দলিল করা হয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস মোল্লা ও সাবেক সচিব বদরউদ্দিন হাওলাদারের নামে। এরমধ্যে ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও জমিটির সাফকবলা কিংবা প্রতিষ্ঠানের দখলে আসেনি। বায়না করা ওই জমি নিয়ে বর্তমানে মামলা চলমান বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা কমিটি।

সার্বিক বিষয়ে অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীস বলেন, ২০১৯ সালে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মীরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদান করি। আমার যোগদানের পুরো প্রক্রিয়াই বৈধ। তবে সাবেক সভাপতি ইলিয়াস মোল্লা ক্ষমতার বলে নিজ দখলে রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়টি আমার জানা নেই। তখন আমি এই প্রতিষ্ঠানে ছিলাম না। এ ছাড়াও ডিআইএ’র তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বাকি দোকান ভাড়ার ব্যাংক রশিদসহ অন্য যেসব সমস্যার কথা জানিয়েছে তা আমরা সমাধান করব। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!