বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এদিন শুনানি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালে কলিমুল্লাহর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করেন বিচারক। এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সময় নিয়োগ ও ভর্তিবাণিজ্য বন্ধ করেছিলাম, সে জন্য দীপু মনি আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা ছড়িয়েছেন। শুনানির একপর্যায়ে বিচারক আসামি কলিমুল্লাহকে বলেন, ‘কবরে আর জেলখানায় একাই যেতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন বিচারক বলেন, আপনি ২০১৭ সালে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন? কলিমুল্লাহ বলেন, জি স্যার। বিচারক, আপনি ফুল টাইম ঢাকায় থাকতেন? কলিমুল্লাহ বলেন, না স্যার।
বিচারক বলেন, আপনি ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই ঢাকায় থাকেন। তিনি বলেন, না স্যার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতাম। আমি প্রতিদিন ১৭-১৮ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করেছি।
পরে এক আইনজীবী বিচারককে বলেন, তাকে প্রায়ই টক শোতে দেখা যেত। টক শো কখন করেছেন। কলিমুল্লাহ বলেন, রাতে টক শোতে সময় দিয়েছি। পরে তিনি বলেন, দীপু মনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছেন। বিচারক বলেন, আপনি ও আপনার মা-ও একই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন? জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এখানে আমার কোনো দায় ছিল না।
আমার মা মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের ডিজি ছিলেন। সে সময় সরকার তাকে নিয়োগ বোর্ডে দিয়েছে। আপনি কী একসঙ্গে উপাচার্য, ডিন, বিভাগীয় প্রধান ছিলেন? তিনি বলেন, আমার আগেও এ রকম ছিল। আগের উপাচার্যদের থেকে এ রকম নিয়ম চলে এসেছে। আমাদের এখানে আগে পুরো প্রফেসর ছিল না। বিচারক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভিসিকে এ রকম নিয়মে দেখিনি। তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম নিয়ম নেই। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ দায়িত্ব নিতে হয়েছে। প্রশাসনের পদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। পদ তো খালি রাখা যায় না। আপনি চার বছরে ডেভেলপমেন্ট খাতে কত টাকা পেয়েছেন? তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে আমি ৯৯ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। বিচারক বলেন, চার বছরে? তিনি বলেন, না, একটা প্রকল্পে।
আমার বিরুদ্ধে পুরো প্রচারণা দীপু মনি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ মূলত সমন্বয়সংক্রান্ত বিষয়। এখানে মন্ত্রণালয়সহ অনেক পক্ষ আছে। চাইলেই একক হাতে এটা করা যায় না। দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রকৌশলীরা এখনো আছে। সেখানে কাজ করছে। নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ আগের উপাচার্যের বিরুদ্ধে। আমি গিয়ে মাটির ওপর পর্যন্ত ঢালাই পেয়েছি। মাটির নিচে কাজ হয়ে গেলে, নকশা পরিবর্তন করা যায় না।
পরে বিচারক বলেন, আপনার বিরুদ্ধে উপাচার্য থাকাকালীন ভর্তি বাণিজ্য ও চাকরি বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। কলিমুল্লাহ বলেন, আমি বরং এসব বন্ধ করেছিলাম।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর মহসিন রেজা বলেন, তাকে আমরা টক শোতে প্রায় দেখি। তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অনেক অভিযোগ আছে। বিচারক বলেন, অন্য কোনো মামলা আছে? না দুদকের মামলা।
পরে বিচারক বলেন, আপনার বিরুদ্ধে যেহেতু দুদকের একটা অভিযোগ এসেছে। সেটার তদন্ত হোক। দেখা যাক তদন্তে কী প্রমাণিত হয়।
পরে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে গত ১৮ জুন মামলা হয়। আমাকে হঠাৎ অপ্রস্তুত অবস্থায় আনা হয়েছে। আমি ভাবছি, আমাকে ডাকা হবে, জিজ্ঞাসা করা হবে। কিন্তু সে ধরনের কিছু হয়নি। আজ (গতকাল) সকালে একা থাকা অবস্থায় আমাকে ডিবি গ্রেপ্তার করে। পরে বিচারক বলেন, আসছেন একা, যাবেনও একা। কবরেও একা যাবেন, জেলখানায়ও একা।