শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

সিলেটের জাফলং

বালু লুটের মহোৎসবে সব দলই একাকার

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

বালু লুটের মহোৎসবে সব দলই একাকার

সিলেটের জাফলংয়ে রাত নামা মানে মহোৎসব শুরু। এই উৎসবে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, এনসিপিÑ সবাই মিলেমিশে একাকার। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। তবে সেটি কোনো ইতিবাচক উৎসব নয়।

প্রতিদিন রাত নামলেই জাফলংয়ে শুরু হয় বালু লুটের উৎসব। আর সেই উৎসবে নাম জড়িয়ে আছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, এনসিপির নেতাকর্মীদের। রাজনীতির মাঠে তারা প্রতিপক্ষ হলেও সিলেটের জাফলংয়ে বালু লুটপাটের বেলায় তারা এক। বালু লুটপাট পরিচালনার জন্য জাফলংয়ের বল্লাঘাটে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ব্যাক হাউস’। এই ব্যাক হাউস থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় জাফলংয়ের বালু লুট। বালু খেকু সিন্ডিকেটের আসর বসে এখানে।  

গত ৫ আগস্টের আগে জাফলংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের হাতে। তারাই ছিল পাথর রাজ্যের অধিপতি। নিয়ন্ত্রণ করতেন খোদ সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি ইমরান আহমদ। তিনি তার তিন খলিফা দিয়ে পুরো রাজ্য দেখাশোনা করতেন। তবে ৫ আগস্টের পরে সেটি হাতছাড়া হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। রাজত্বে আসেন নতুন কয়েকজন কর্ণধার। প্রথম দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝাপিয়ে পড়লেও তাদের সঙ্গে যোগ দেয় জামায়াত-এনসিপি। দুই উপদেষ্টার জাফলং পরিদর্শনের পর এনসিপির কয়েকজন সেখানে গিয়ে ভাগ বসিয়েছেন, বাতাসে এমন গুঞ্জন এখন খুব জোরালো। বালু লুটে কিছুদিন পর আবার এসে যোগ দেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীও। বর্তমানে সব দল একাকার হয়ে জাফলংয়ে বালু চুরির উৎসব হচ্ছে। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে জাফলংয়ের নদীর ঘাটে আসে শত শত ট্রাক। প্রতিদিন যার সংখ্যা হবে ২০০ থেকে ২৫০টি। অন্যদিকে চা-বাগানের পাশের ছোট ছোট খাল দিয়ে এক গভীর রাতে এসে নামে শত শত নৌকা। সঙ্গে হাজার হাজার শ্রমিক। তারা রাতের অন্ধকারে হামলে পড়ে জাফলংয়ের বালু মহালে। এ সময় পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও হাজার হাজার বালুখেকোদের সঙ্গে পেরে ওঠে না। রাতব্যাপী অনেকটা চোর-পুলিশ খেলা চলতে থাকে লুটপাটে নামা বারকি শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে। 

গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ স্বীকার করেন প্রতিদিন রাতে জাফলং থেকে বালু চুরির বিষয়টি। তবে তিনি বলেন, আমরা সতর্ক থাকি। সীমিত জনবল দিয়ে আমাদের পক্ষে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আমরা সারা রাত জাফলংয়ে একাধিক টিম নিয়োজিত রাখি। পুলিশের উপস্থিতিতে বালুখেকোরা দূরে থাকে। কিন্তু অন্ধকারে সুযোগ পেলেই তারা খাল নদী দিয়ে এসে নেমে পড়ে। তবে তিনি ট্রাকে করে বালু লুট হয় না জানিয়ে বলেন, সড়ক পথে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রাকে করে বালু নিয়ে যাওয়া কঠিন। 

সূত্র জানায়, জাফলংয়ের বল্লাঘাট, জুমপার নয়াবস্তি, জাফলং নদীর ঘাট ব্রিজে অবস্থান নিয়ে ট্রাক নৌকা থেকে বালু সংগ্রহ শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু নিয়ে ট্রাকগুলো বের হয়ে যায় জাফলং এলাকা থেকে। রাতের অন্ধকারেই এসব নৌকা হারিয়ে যায় জাফলং থেকে। আর সকাল হওয়ার আগেই ট্রাকের সারি সিলেটের সীমানা অতিক্রম করে চলে যায় অজানা গন্তব্যে। এগুলো দিয়ে প্রতি রাতে পরিবহন করা হয় এক থেকে দেড় লাখ ফুট বালু। যার বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকারও উপরে। এভাবেই প্রতিরাতে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ বালু পাচার হয়ে যাচ্ছে জাফলং থেকে। খরচ ছাড়া মুনাফা থেকে যায় কোটি টাকার উপরে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট ওই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। যে সিন্ডিকেটে আছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও এনসিপির কতিপয় নেতাকর্মী। তবে বাদ যায় না প্রশাসনও। সিন্ডিকেট স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসাকে নিরাপদ রাখছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় একাধিক সূত্র। তবে তথ্যদাতা কেউই ভয়ে নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

সূত্র জানায়, রাতের আঁধারে বালু লুটপাটের পেছনে দুজনের নাম এখন আলোচিত। তারা হলেনÑ বিএনপির বহিষ্কৃৃত নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ এবং জাফলংয়ের লর্ড খ্যাত আনোয়ার হোসেন খান আনু। স্থানীয়রা জানান, রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তবে জাফলংয়ের পাথর লুটপাটের অভিযোগে শাহপরাণের জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকের পদ স্থগিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও করেছে। শাহপরাণের টিমে আছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছমেদ আহমদ, জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজদ বখত, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ছাত্রদল নামধারী সোহেল, ইউসুফ, রাজ্জাক ও আওয়ামী লীগের আলিম উদ্দিন। রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান করে রাতের আঁধারে বালু চুরির কার্যক্রম চালিয়ে যান। অবৈধভাবে উপজাতি অর্থ সবার মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয় তার নির্দেশনায়। অতি গোপনে সেলিম জমিদার ও শাহ আলম স্বপনের ভাগও পৌঁছে দেওয়া হয়। 

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মিথ্যাচার হচ্ছে। আমার দলের একাধিক লোক বালু ও পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত। তারাই আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করছে। এতে তারা আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও ব্যাবসায়িক সুনাম নষ্ট করছে। 
তিনি আরও বলেন, আমি সবুর করে আছি। আল্লাহ পাকের দরবারে নালিশ দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা রটাচ্ছে তিনি তাদের বিচার করবেন। 

স্থানীয়রা জানান, জাফলংয়ের লর্ড খ্যাত আনোয়ার হোসেন খান আনু হচ্ছেন বালুখেকু সিন্ডিকেটের শীর্ষ কর্ণধার ও প্রভাবশালী। এই আনু আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব সমস্যার সমাধান করে দেন। তার টিমের প্রধান সদস্যরা হলেনÑ কাশেম, শাহজাহান, আবদুল আলিমসহ কয়েকজন। এই সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন, পাথর উত্তোলনসহ অন্যান্য অবৈধ কর্মকা- পরিচালনা করেন। তবে নেপথ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন আনু। আনুর কাজ হলো কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তার সমাধান করে দেওয়া। সমস্যা সমাধানে তার জুড়ি নেই। জটিলতা নিরসনে আনু যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রাত গভীর হয়ে এলে জাফলংয়ের বল্লাঘাটে অবস্থিত আনুর আস্তানায় অপরাধ জগতের সম্রাটরা জড়ো হন। আনুর এই আস্তানা স্থানীয়দের কাছে ‘ব্যাক হাউস’ হিসেবে পরিচিত। গভীর রাত পর্যন্ত এই ব্যাক হাউসে বসে জাফলংয়ের অপরাধ জগত নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় পুরো জাফলংয়ের অপরাধ জগত। এ বিষয়ে কথা বলতে আনুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!