দেশে উদারপন্থি রাজনীতির পরিবর্তে উগ্রপন্থি রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আপনারা মনে রাখবেন, দেশে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রটা হচ্ছেÑ এই দেশে মধ্যপন্থার রাজনীতি, উদারপন্থি রাজনীতি, উদারপন্থি গণতন্ত্রকে সরিয়ে দিয়ে একটা উগ্রবাদের রাজনীতিকে নিয়ে আসা হবে। এটা হলে বাংলাদেশের জন্য চরম ক্ষতিকর হবে। আমাদেরকে সে জন্য উদারপন্থি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘রক্তাক্ত জুলাই’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সৈয়দা ফাতেমা সালামের এ বই প্রকাশ করেছে ইতি প্রকাশন। কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, লেখক সৈয়দা ফাতেমা সালাম ও প্রকাশক জহির দীপ্তি।
‘রক্তাক্ত জুলাই’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানি যে রাজনীতিতে অবশ্যই মতভেদ থাকবে, রাজনীতিতে বিভিন্ন রকম চিন্তা থাকবে, মত থাকবে। কিন্তু এখন যে পরিবেশটা আমাদের আছে, সেই পরিবেশটাতে আমাদের জনগণ কিন্তু অত্যন্ত বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন, মানুষকে জিজ্ঞেস করলে মানুষ বলে, ‘নির্বাচন হবে তো?’ এই যে একটা এক ধরনের শঙ্কা-আশঙ্কা এবং এক ধরনের হতাশা এসে যায়। আমি যেটা সব সময় বলি যে, নির্বাচন হবেই এবং যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেই সময়েই হবে। এ কারণে যে, এর কোনো বিকল্প নেই। আজকে যদি নির্বাচন বন্ধ করা হয় বা নির্বাচন না হয়, তাহলে এই জাতি প্রচ- রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বাড়বে।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, গতকাল একজন বিখ্যাত সম্পাদক মহোদয়ের সঙ্গে আমার রাতে একটা আলোচনা হয়েছিল। সেখানে তিনি যে কথা বললেন, সেটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আপনারা কী করছেন, না করছেন, জানি না; বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপি পরিবর্তন আনবে। যে ফ্যাসিবাদ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি, সমাজ, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাÑ এগুলোর পরিবর্তন বিএনপি নিয়ে আসবে; এটা মানুষের আশা।
তিনি বলেন, ওই জায়গাটাকে আপনারা নষ্ট করবেন না, ওই জায়গাটা ধরে রাখবেন এবং সেটা যেন ফলপ্রসূ হয়, আমরা যেন সেখানে পৌঁছতে পারি, তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমি আবারও আপনাদের অনুরোধ করব, আমরা সবাই একটা বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হই যে, দেশের মানুষের যে আশা, যে প্রত্যাশা, যে স্বপ্নÑ সেটাকে আমরা বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা যারা বিএনপির কর্মী আছি, তারা সবাই একযোগে কাজ করব। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যারা বিএনপির সঙ্গে জড়িত, যারা বিএনপির কর্মী-সুহৃদ-নেতা, তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, এই সুযোগটা অন্য কাউকে দেবেন না, যেখানে তারা বলতে না পারে, ‘বিএনপি খারাপ কাজ করছে’Ñ এটা খুব জরুরি। আপনারা মনে করবেন না যে, আপনারা ক্ষমতায় চলে এসেছেন। এটা অনেকেই মনে করছেন; মনে করছেন বলেই দুর্বৃত্তায়নগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এখনো আপনারা ক্ষমতার কাছেও আসেননি। অনেক চক্রান্ত আছে, ষড়যন্ত্র আছেÑ সেগুলোকে ওভারকাম করে আপনাদের ঐক্য দিয়ে, ভালো কাজ দিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে একটা পরিবর্তন মানুষ চায়, পরিবর্তনের জন্য মানুষ কিন্তু উন্মুখ হয়ে আছে। আর এই পরিবর্তন তারা বিএনপির কাছে চায়। বিএনপিকে এই পরিবর্তনটা দিতে হলে সেইভাবে কিন্তু তাদের নেতাকর্মীদের জনগণের সামনে নিয়ে আসতে হবে। আসুন, আমরা সেই লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমি বারবার বলেছিÑ আপনারা সবাই জানেন, এই গণতন্ত্রের উত্তরণের জন্য আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি। এই গণতন্ত্রের উত্তরণের জন্য আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াÑ তিনি ছয় বছর কারাগারে ছিলেন এবং কী কষ্ট তিনি পেয়েছেন সেটা সবাই জানি।
