বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে সরব সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষক। বর্তমান সরকারের কাছে তাদের দাবিগুলো জানাচ্ছেন তারা। কিন্তু এই সরকারের অধীনে বেতনসহ গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন কেবল নির্বাচিত সরকারের অধীনে সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত এ কারণে শিক্ষকদের দাবিগুলোর ব্যাপারে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে রাজনৈতিক দলগুলো কী ভূমিকা নেবে সেদিকেই নজর রাখছেন অনেকে।
আর দলগুলোও বলছে, তারা শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য দাবিগুলোর ব্যাপারে অবগত। এ নিয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনাও সাজাচ্ছে। ক্ষমতায় গেলে তারা সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি শুরুতেই বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ার পর নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার গঠনের পর বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা দাবি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে হাজির হন শিক্ষকরা। এর মধ্যে গ্রেড বাড়ানোর দাবি প্রাথমিক শিক্ষকদের, জাতীয়করণের দাবি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এমপিওভুক্তির দাবি বঞ্চিত শিক্ষকদের। এ ছাড়াও বিভিন্ন দাবির মধ্যে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ অনেক দাবি রয়েছে। এসব দাবির মধ্যে কিছু কিছু দাবি বাস্তবায়ন করেছে বর্তমান সরকার। তবে বেতন-ভাতা ও জাতীয়করণসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি বাস্তবায়ন হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত আইনগতসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণেই আটকে আছে শিক্ষকদের দাবিগুলো। এই জটিলতাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নিরসন সম্ভব নয়। তাই নির্বাচিত সরকার গঠিত হলে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব।
আগামী বছরের শুরুরদিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছে বর্তমান সরকার। ফলে নতুন বছরে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে। এ কারণে এখন দাবিগুলোর ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘দল ক্ষমতায় আসলে শুধু শিক্ষক নয় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সকল শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য থাকবে না।’
শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির উপদেষ্টা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দীন বকুল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা একটা কমিটি গঠন করব। স্থানভেদে যেসব শিক্ষকদের মেধা ভালো পর্যবেক্ষণ করে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। বেতন-গ্রেড বাড়ানো হবে। যোগ্যতা সম্পন্নদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। বাদ যাবে না অন্য শিক্ষকরাও। তাদের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষক-সংক্রান্ত, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা-সংক্রান্ত, এমপিও-ননএমপিও, শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা এবং শিক্ষকদের অবসর ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অবগত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পরামর্শমূলক একটি লিখিত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার গদির জন্য শুধুমাত্র শিক্ষকদের ব্যবহার করেছে। কিন্তু শিক্ষকসমাজ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তাদের যৌক্তিক দাবি রাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করলেও আওয়ামী সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি; বরং দেখা গেছে শিক্ষকদের ‘জামায়াত-শিবির’ ট্যাগ দিয়ে হামলা-মামলা দিয়ে জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। বহু শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শিক্ষকদের হয়রানির প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী বরাবরই সোচ্চার ছিল এবং থাকবে। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির স্বপক্ষে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছিল, আছে এবং থাকবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব (শিক্ষা ও গবেষণা) ফয়সাল মাহমুদ শান্ত রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক। আমরা সেই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে এই সরকারের কাছে জাতীয়করণ বাস্তবায়নের দাবি করছি এবং সেটি আওয়ামী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার স্বজনপ্রীতির স্টাইলে নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ কমিশনের গঠনের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় করতে হবে।’
শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে জাতীয় নাগরিক পার্টি শিক্ষকদের প্রথমত বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো তৈরি করবে। দ্বিতীয়ত এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধারাবাহিক ভাবে জাতীয়করণের আওতায় আনা হবে।’