শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

শিক্ষক জান্নাতুলকে শেষ  বিদায়, অঝোরে কাঁদলেন  শিক্ষার্থী-সহকর্মী-বন্ধুরা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

শিক্ষক জান্নাতুলকে শেষ  বিদায়, অঝোরে কাঁদলেন  শিক্ষার্থী-সহকর্মী-বন্ধুরা

জাকসু নির্বাচনকে নিয়ে বিগত কয়েক মাস শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল উৎসবের আমেজ। গত বৃহস্পতিবার নানা অনিয়ম, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ও ছাত্রদলসহ ৫টি দলের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া ভোট গণনা গতকাল শুক্রবার রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল। এরই মধ্যে ঘটে গেল এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। গতকাল শুক্রবার সকালে ভোটের দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির চারুকলা বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস। তার এই মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। আনন্দের ভোট পরিণত হয়েছে বিষাদে। চিকিৎসকরা জানান, কার্ডিয়াক অ্যাটাকের কারণে সেন্সলেস হওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মাথায় শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মৃত্যুবরণ করেছেন। 

৩২ বছর বয়সি জান্নাতুল ফেরদৌস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে একই বিভাগের শিক্ষক হন। জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ি পাবনা শহরের কাচারীপাড়া মহল্লায়। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ইত্তেফাকের পাবনা জেলা প্রতিনিধি রুমি খন্দকারের একমাত্র মেয়ে। জান্নাতুল ফেরদৌস জাকসু ও প্রীতিলতা হল সংসদ নির্বাচনে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জানাজা শেষে তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীরা অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। 

জান্নাতুল ফেরদৌসের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার ভোট গণনা করতে আসার পর সকাল পৌনে ৯টার দিকে জাকসু নির্বাচন অফিসে বসে কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ পড়ে যান শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। এ সময় সহকর্মীরা স্ট্রেচারে করে তিনতলা থেকে নিচতলায় নামিয়ে আনেন তাকে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে জরুরি চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর খবরে শুক্রবার সকালে ভোট গণনার কক্ষে শোকাবহ আবহ তৈরি হয়। নির্বাচনের দায়িত্বরত পোলিং কর্মকর্তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা উপস্থিত সবাইকে হতভম্ব করেছে। এমন ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। এদিকে অনাকাক্সিক্ষত এই মৃত্যুতে শোকের মাঝেও নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যক্রম থেমে ছিল না। শোকাহত হলেও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কাজ করছেন।

দুপুরে তার লাশ নিয়ে আসা হয় পুরাতন কলাভবনের সামনে। সেখানে দেখা যায়, সহকর্মী, শিক্ষক কিংবা প্রিয় বন্ধুরা শেষবারের মতো তাকে দেখতে সেখানে ভিড় করেছেন। সহকর্মীর অকালপ্রয়াণে বাকরুদ্ধ হয়ে বিভাগের অন্য শিক্ষকেরা দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চুপ। বেলা সোয়া ১টার দিকে লাশবাহী গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

‎চারুকলা বিভাগটির ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ঐশী সরকার বলেন, তিনি এমন একজন শিক্ষক ছিলেন, যার কাছে অকপটে সব কিছু বলা যেত। শিক্ষক হলেও তিনি ছিলেন বোনের মতো। শিক্ষার্থীবান্ধব এমন একজন শিক্ষককে অকালে হারাতে হবে, কখনো ভাবতেই পারিনি।

একই বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার মৌরি বলেন, চাদর সরিয়ে ম্যামের মুখটা দেখলাম। দেখে মনে হলোÑ উনি শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তার। দুদিন আগেও মন খারাপের সময় আমাদের বোঝালেন, জীবনে অনেক বড় হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। এ রকম একটা মানুষ চোখের সামনে এভাবে চলে যাবেন, কখনোই ভাবিনি। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, ম্যাম আসলে আমাদের মাঝে নেই।

ভোট গণনাকালে এই অনকাক্সিক্ষত মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অব্যবস্থাপনা এবং বিশেষ করে বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন নবাব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। বলেন, নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনার জন্যই আমার সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌসীর মৃত্যু হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমি এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। এই মৃত্যুর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ‎পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন রুনু বলেন, আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। ৩৩ বছর পর জাকসু ফিরেছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের বড় ধরনের অব্যবস্থাপনা সামনে এসেছে। কী ভিত্তিতে তারা হঠাৎ করে হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা জানি না।

‎‎তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় এক শিক্ষিকার মৃত্যু সরাসরি কমিশনের অদক্ষতা ও গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করে। চারুকলা বিভাগের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আশা করি, ভবিষ্যতে তারা সব অনিয়মের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবেন।

‎‎বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলমের কথায়Ñ রাতে সবাই ক্লান্ত ছিলেন। পোলিং এজেন্ট না থাকায় সব হলের ভোট গণনার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও (জান্নাতুল ফেরদৌস) বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু সিনেট হলের দরজায় এসে পড়ে যান। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!