ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দর্শনা রেলবন্দর

এক বছরে রাজস্ব কমেছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম

* সরকার পরিবর্তন ও ডলার সংকটে কমেছে এলসি
* আমদানি স্বাভাবিক হলে রাজস্ব বাড়বেÑ দাবি সংশ্লিষ্টদের

একটা সময় শ্রমিক, ট্রাকচালক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস আর রেলবন্দর কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা ছিল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে। রেল ইয়ার্ডে শত শত ট্রাক থাকত পণ্য পরিবহনের জন্য। তবে সেই পুরোনো কর্মব্যস্ততা এখন আর নেই। 

এ রেলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি সহজ ও তুলনামূলক কম খরচ হওয়ায় বন্দরটি ছিল ব্যবসায়ীদের পছন্দের শীর্ষে। তবে নানা জটিলতায় স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি। এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় কমেছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

জানা গেছে, এ রেলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মালবাহী ওয়াগনে করে ভুট্টা, পাথর, পেঁয়াজ, চায়না ক্লে, ফ্লাইএ্যাশ, জিপসামসহ বিভিন্ন পণ্য আমাদনি হতো। এখন আসছে শুধু ফ্লাইএ্যাশ ও সয়াবিন ভূষি। 

রেলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ হাজার ৭৪৯ ওয়াগনে পণ্য আমদানি হয় ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৯ টন, যা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৮৬ ওয়াগনে করে ২ লাখ ৫২ হাজার ১০১ টন পণ্য আমদানি হয়, যা থেকে রাজস্ব আয় হয় ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব কমেছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৮টি ওয়াগনে ১২ লাখ ৩২ হাজার ৬১৬ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৫৯ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এক হাজার ৫৫৪ ওয়াগনে ৯১ হাজার ৯৭৭ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে চার কোটি ১২ লাখ টাকা।

এদিকে কাজ না থাকায় বন্দরের শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন পার করছেন তারা। পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। তবে শ্রমিকেরা এখনো স্বপ্ন দেখছেন দেশের ব্যবসায়ীরা আবারও ভারত থেকে বেশি বেশি পণ্য আমদানি করবেন। আর আমদানি বাড়লেই কাজের গতি ফিরবে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল ইয়ার্ডে। 

শ্রমিকরা বলেন, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সবকিছুই থমকে যায়। এক-দুই মাসে একটি গাড়ির মালামাল এখানে নামে। কাজ না থাকায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। আমরা চাই পরিস্থিতি আবার আগের মতো স্বাভাবিক হোক।

বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দর দিয়ে মালবাহী ওয়াগনে করে পণ্য আমদানি করতেন তারা। দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি ও খালাসের পর নির্দিষ্ট স্থানে চাহিদামতো সরবরাহ সম্ভব হতো। তবে সরকার পরিবর্তন ও ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে তাদের চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। হাতেগোনা কয়েক ব্যবসায়ী দু-একটি পণ্য আমদানি করলেও তা অন্যত্র খালাস হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে খুব সহজে পণ্য আনার জন্য দর্শনা বন্দর ব্যবহার করতেন স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। তবে দেশে রাজিনৈতিক সরকার না থাকায় বাণিজ্য থমকে গেছে।  

তারা বলেন, এলসির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাওয়া যায় না সব সময়। ডলারের একটা বড় সংকট রয়েছে। আগে ব্যাংকে অর্ধেক টাকা দিলেই এলসি খোলা যেত। কিন্তু এখন ব্যাংকে সব টাকা পরিশোধ না করলে এলসি খোলা যায় না। এটাও এক ধরনের বাধা।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ বন্দরের প্রাণ ফিরবে না। নিয়মিত পণ্য আমদানি না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মির্জা কামরুল হক বলেন, ভারত থেকে পণ্য আমদানি না হওয়ার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব খাতে। গত বছরের তুলনায় এ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আয় হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ভারত থেকে শুধু ফ্লাই অ্যাশ বা ছাই ও সোয়াবিনের ভূষি আসছে। পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ায় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। আমদানি স্বাভাবিক হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

মির্জা কামরুল হক আরও বলেন, গত দুই-তিন অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও পণ্য আমদানি কমেছে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আদায়ও কমেছে।