ঢাকা বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামে আগুন

বাঁচানো গেল না ফায়ার  ফাইটার শামীমকে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম
  • দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক 
  • আহতদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আগুনে পুড়ে গেছে শরীরের শতভাগ। ঝলসানো শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ২৪ ঘণ্টা ছটফট করে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ। অগ্নিকা-সহ যেকোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে সবার আগে সাড়া দেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। নিজের জীবন বাজি রেখে রক্ষা করেন অন্যের প্রাণ ও সম্পদ। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে প্রায়ই ঝরে যায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রাণ। এবার এ তালিকায় যুক্ত হলেন ফায়ার ফাইটার শামীম। গাজীপুরে টঙ্গীর কেমিকেল গোডাউনে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান তিনি। এ নিয়ে গত ১০ বছরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ২৪ সদস্য। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৯০ জন। 

শামীমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, শরীরের শতভাগ পুড়ে যাওয়া শামীমকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। সেখানেই তিনি মারা গেছেন। বর্তমানে আরও তিনজন চিকিৎসাধীন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শামীমের বড় ভাই রুহুল আমিন জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতী গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল হামিদ। স্ত্রী মনি আক্তার ও ৩ সন্তান নিয়ে টঙ্গীতে থাকতেন শামীম। রুহুল আমিন আরও জানান, আনুমানিক ২০ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন শামীম। সম্প্রতি লিডার পদে পদন্নোতি পেয়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মাগরিবের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে শামীমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনেরা। 

ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, কেমিক্যাল গোডাউনে সোডিয়াম জাতীয় দ্রব্য ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গেলে কেমিক্যাল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দগ্ধ হন। আহতদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। এখনো ৩ ফায়ার ফাইটার ঢাকায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং দোকান কর্মচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। 

জানা গেছে, গতকাল রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরে ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে গতকাল সকালে গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামের আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ ফায়ারকর্মীদের দেখতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট একটা আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল। এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো। এখানকার ডাক্তাররাসহ সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি তারা (আহত দগ্ধরা) যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।

স্বরাষ্ট উপদেষ্টা বলেন, ‘দগ্ধ ফায়ারকর্মীদের সুচিকিৎসায় আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, আহতদের চিকিৎসায় কোনো ধরনের অবহেলা বা গাফিলতি করা যাবে না। আহতদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘দগ্ধদের চিকিৎসায় আমাদের একটা মনিটরিং টিম সব সময় কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেশে না বিদেশে করা হবে, তখন এ ধরনের প্রশ্ন এসেছিল। এ বিষয়ে আমরা সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেব। এ ক্ষেত্রে আবেগকে প্রাধান্য না দিয়ে বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। রোগীদের সুচিকিৎসায় আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার, তার সবই করা হবে।’ 

এ সময় অন্যদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালসহ জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসরা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রসঙ্গত, গত সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে টঙ্গী বিসিক এলাকায় সাহারা সুপার মার্কেটের পাশে একটি কেমিকেল গোডাউনে আগুনের খবর পেয়ে সেখানে যায় ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট। আগুন নির্বাপণের কাজ করার সময় হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ হলে দগ্ধ হন ৪ ফায়ার ফাইটারসহ আরও কয়েকজন। ফায়ার সার্ভিসের চারজনের মধ্যে জয় হাসান নামে একজনের শরীরের ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। এ ছাড়া নুরুল হুদা ও শামীম আহমেদের শ্বাসনালিসহ শরীরের প্রায় শতভাগ অংশ পুড়ে যায়। আর ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের ৪২ শতাংশ পুড়ে গেছে। জান্নাতুল নাঈম ও নুরুল হুদার অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।