অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পার হলেও এখনো গঠন হয়নি তথ্য কমিশন। কমিশন না থাকায় শুনানি না হওয়ায় অর্ধসহস্রাধিক আবেদন পড়ে আছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। কমিশনেও রুটিন দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ হচ্ছে না। তথ্য কমিশন গঠনে সরকারেরও নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। ফলে একদিকে যেমন তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে অলস সময় পার করছেন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মাচারীরা। রাষ্ট্র সংস্কারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তথ্য কমিশন কার্যকর না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) সংশ্লিষ্টরা। তারা দ্রুত তথ্য কার্যকর করতে স্বাধীন তথ্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
এমন বাস্তবতায় তথ্য অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ উদযাপিত হবে ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’। ইউনেসকো স্বীকৃত দিবসটি প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পরিবেশ রক্ষায় ডিজিটাল যুগে তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ’, যা আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২৫-এর ইউনেসকো ঘোষিত থিমের সঙ্গে মিল রেখে করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকারি দপ্তর-অধিদপ্তরে তথ্য চেয়ে আবেদন করার পর যদি ওই তথ্য পাওয়া না যায়, তাহলে আপিল আবেদন করা যায়। এরপর আপিল আবেদনেও যদি ওই দপ্তর-অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তথ্য না দেন, তাহলে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। তথ্য কমিশনে অভিযোগ করার পর কমিশন উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করে রায় দেয়।
তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, একজন প্রধান এবং দুজন তথ্য কমিশনার নিয়ে তথ্য কমিশন গঠন করা হয়। তথ্য কমিশনারদের মধ্যে একজন হবেন নারী। প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ দিতে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি করা হয়।
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেন বিগত সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রধান তথ্য কমিশনার আবদুল মালেক ও তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক। অপর তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টিকে অপসারণের পাশাপাশি তথ্য কমিশনের সচিব জুবাইদা নাসরীনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে তথ্য কমিশনের শীর্ষ পদগুলো শূন্য। এরপর এক বছর পেরিয়ে গেলেও তথ্য কমিশন পুনর্গঠন করা দূরে থাক, এখনো বাছাই কমিটিও গঠন করেনি সরকার।
এ প্রসঙ্গে টিআইবি গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, কর্তৃত্ববাদের পতনের পর থেকে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় নতুন করে তথ্য কমিশন গঠন হয়নি। এতে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি অনতিবিলম্বে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তথ্য কমিশনের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান করতে হবে। একই সঙ্গে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং তথ্য কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজানোসহ কার্যকর স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তথ্য কমিশন কার্যকর করা এবং তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। নাগরিক সমাজ এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদানসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুপারিশ প্রদান করার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষার প্রতি সরকারের এই দৃশ্যমান উদাসীনতা দুর্ভাগ্যজনক, যা এই সরকারের অন্যতম একটি ব্যর্থতা।
এ প্রসঙ্গে জানতে তথ্য কমিশনার (রুটিন দায়িত্ব) নূর মো. মাহবুবুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তথ্য অধিকার দিবসে সরকারি কর্মসূচি
তথ্য অধিকার দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। গতকাল শনিবার সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তথ্য বিবরণীতে আরও জানানো হয়, দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ রোববার বেলা ৩টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশনের অডিটোরিয়ামে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তথ্য কমিশনের সচিব নূর মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। এ ছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম।