আশ্বিন মাসের মধ্যভাগে গত বুধবার রাতে বজ্রপাতসহ মুষলধারে ভারি বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দেখা দেয় তীব্র জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিস্নাত রাত রাজধানীবাসীকে স্বস্তির ঘুম এনে দিলেও ঘুম ভাঙতেই জলাবদ্ধতার সেই চিরচেনা দুর্ভোগের মুখোমুখি করেছে। দুর্গাপূজার ছুটি থাকায় রাস্তাঘাটে যানজট কম থাকলেও বিভিন্ন প্রয়োজনে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা ছুটিতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়ে বিপাকে পড়েন অনেকেই। খালি পায়ে, ভ্যানে করে চলতে দেখা যায় যাত্রীদের।
মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর নিউমার্কেট, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর-১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, কালশিসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলগলিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম হলেও জলাবদ্ধতার কারণে ভোরেই রাজধানীর বেশ কিছু রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারি বৃষ্টিপাতের মধ্যে চলাচলের সময় ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি।
গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা জানান, রাস্তায় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। যে অল্প কয়েকটি বাস রাস্তায় বেরিয়েছে, সড়ক তলিয়ে থাকায় সেগুলোও বিকল হয়ে গেছে। সিএনজি অটোরিকশার ভেতরে থেকে ভিজতে হচ্ছে। ভোগান্তির শেষ নেই।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক টিমকে কাজ করতে দেখা গেছে। তারা সড়কের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করেন। এ ছাড়া ডিএসসিসির ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমকে কাজ করতে দেখা যায়।
সিটি করপোরেশনের কর্মীরা জানিয়েছেন, পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনে ধীরগতি হচ্ছে। ফলে পানি নামতে সময় লেগেছে।
রাজধানীর কালশি এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, সকাল থেকেই এই এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল, হাঁটুপানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়েছে। পরে সিটি করপোরেশনের লোকেরা এসেছে। তারা ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে পানি অপসরণের কাজ করছে।
পরিবার নিয়ে পূজার ছুটিতে গ্রামে যাবেন নীলয় পাল। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের হাঁটু সমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, অপেক্ষা অন্তত গাবতলী পর্যন্ত যাওয়ার কোনো যানবাহন যদি পান। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে পূজার ছুটি কাটাতে বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছি। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বিপাকে আছি। বৃষ্টিও থামছে না। নিজেরাও ভিজছি, ব্যাগে থাকা কাপড়ও ভিজে যাচ্ছে।’