ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

এক উঠানে মসজিদ-মন্দির

শত বছরের সম্প্রীতি

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:৪০ এএম

এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে নামাজ। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগের পর যুগ ধরে চলছে দুই ধর্মের দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। এক পাশে ধূপকাঠি, অপর পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এটা হচ্ছে লালমনিরহাট জেলা শহরের কালীবাড়ি এলাকার পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি কেন্দ্রীয় মন্দির। প্রতিবছরের মতো এবারও শারদীয় দুর্গোৎসবের জমকালো আয়োজন বসেছে মসজিদ-মন্দির মাঠে। সম্প্রীতির এ নিদর্শন মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও এই মন্দির ও মসজিদ পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ১৮৩৬ সালে কালীবাড়ি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে পাশেই মসজিদও প্রতিষ্ঠিত হয়। একই আঙিনায় প্রায় শত বছর ধরে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক বিরোধ ছাড়াই দুই ধর্মের মানুষজন তাদের ধর্ম পালন করে আসছেন। বাজারে মন্দিরের পাশেই মুসলমানরা নামাজ পড়ার জন্য একটি ছোট ঘর তোলেন, সেটা থেকেই নামকরণ করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ। ওই সময় থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কাজ।

প্রতিবছরের মতো এবারও পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেয়। নামাজ বা আজানের সময়সূচি অনুযায়ী পূজা-অর্চনার ঢাক বাজানো বন্ধ রাখা হয়। নামাজ শেষে পূজার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। মসজিদ-মন্দিরে সামনের মাঠে পূজার সময় যেমন মেলা বসে, তেমনি মুসল্লির জানাজাও হয়ে থাকে। দুই ধর্মের মানুষই সমানভাবে মাঠটি ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে এখন পর্যন্ত এই মসজিদ-মন্দিরের প্রাঙ্গণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মসজিদের পাশেই রয়েছে মন্দির। মসজিদের আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবু এখানে সব শ্রেণির মানুষ যার যার ধর্ম পালন করেন।’

কালীবাড়ি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ি। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের দেয়াল ঘেঁষে প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘এটা ধর্মীয় সম্প্রীতি; এ সম্প্রীতি অটুট থাকবে, এটাই আমাদের বিশ্বাস।’