ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

নারী ক্রীড়াঙ্গন এখন গো-চারণভূমি!

রেজাউল করিম, রংপুর
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:৪৬ এএম

অযত্ন, অবহেলা আর দেখভালের অভাবে রংপুর মহানগরে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নারী ক্রীড়াঙ্গন গো-চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। যে মাঠে মেয়েরা খেলাধুলা করে শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখার কথা, সেখানে এখন অবাধে চরছে গরু-ছাগল। অযত্ন-অব্যবস্থাপনায় খেলার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে গেছে। 

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর থেকে মাঠ ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ হলেও যথাযথ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে সেটি কাজে আসছে না। খেলোয়াড়দের জন্য তৈরি করা ডরমিটরি, জিমনেসিয়াম ও অন্যান্য ভবন এখন তালাবদ্ধ। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুধু অপচয় হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারীদের খেলাধুলার প্রসার, উন্নয়ন ও বিকাশে ২০১৭ সালে ১০ একর জমির ওপর ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর মহানগরীর উত্তমহাজির হাট এলাকায় ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ৪ মাস আগেই ২০২৩ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জেলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত নির্বাচনি জনসভা থেকে ওই ক্রীড়া কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সূত্র জানিয়েছে, ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও মাঠ প্রস্তুত হওয়ার সময় ২০২২ সালে ‘বিভাগীয় কমিশনার কাপ নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার নারী ফুটবল দল তাতে অংশ নেয়। এরপর কোনো ধরনের খেলা গড়ায়নি এই কমপ্লেক্স ও মাঠে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর বিভাগীয় নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্সের প্রধান গেটটি তালাবদ্ধ। ছোট গেট খোলা রয়েছে। ওই গেট দিয়েই স্থানীয়রা খেলার মাঠে কেউ গরু চরাচ্ছেন, কেউ ঘাস কাটছেন। মাঠজুড়ে রয়েছে আগাছা, ঘাস আর বড় বড় কাশফুল। 

জানালায় ভাঙা কাচ, দেয়াল স্যাঁতসেঁতে, দাগ সবই অবহেলার সাক্ষ্য দিচ্ছে। যে জিমনেসিয়ামে খেলোয়াড়দের শরীরচর্চা হওয়ার কথা, সেটি এখন তালার আড়ালে অন্ধকার ঘর। ডরমেটরি ঘরগুলোয় জমেছে ধুলো আর মাকড়সার জাল। যত্রতত্র পড়েছে শ্যাওলা, ভবনে ধরেছে ফাটল। ইনডোর, হোস্টেল, অফিস ও কনফারেন্স রুমÑ সবকিছুই অযতেœ পড়ে আছে।  

স্থানীয়রা জানান, উদ্বোধনের পর থেকে এখানে সংশ্লিষ্ট কাউকে দেখা যায়নি। অনেক দিন থেকে অবহেলায় পড়ে আছে। কেউ আসে না, কোনো খেলাধুলা হয় না। ভবনের কোটি কোটি টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

স্থানীয় আজিজুল বারি স্বপন জানান, একটা টুর্নামেন্টের খেলা দেখছি। এরপর প্রায় ৯ বছর হয়ে গেল আর কোনো খেলা হয় নাই। তখন থেকে এটা বন্ধ। এত বড় একটা কমপ্লেক্স বছরের পর বছর ধরে অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে। সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অথচ কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।

স্থানীয় কিশোরী আফসানা আক্তার বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম এখানে মেয়েরা নিয়মিত খেলাধুলা করবে, আমরাও সুযোগ পাব। কিন্তু মাঠটা তো আর মাঠ নেই, এখন শুধু গরুই চরে। সেখানে যাওয়া যায় না।’

সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ আরিফা জাহান বীথি বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনটি চালু হলে মেয়েদের খেলাধুলার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতো। অথচ এখানে খেলাধুলার সবকিছু ব্যবস্থা থাকলেও সুযোগ-সুবিধা আর জনবলের অভাবে পুরোটাই এখন ধ্বংসের পথে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্প এখন ভগ্নদশায়।’ তিনি বলেন, ‘কেন কী কারণে এ কমপ্লেক্স চালু হয় না তা জানি না। আমার কাছে মনে হয়েছে ওখানে সরকারের পুরো টাকাটাই ক্ষতি হয়েছে।’

রংপুর বিভাগীয় নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্স কমিটির বর্তমান সদস্যসচিব সেলোয়ারা বেগম বলেন, ‘এ এলাকার মেয়েদের জন্য কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা ভাবছি, কাজও শুরু করে দিয়েছি। এটা অবহেলায় পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। বিগত বছরগুলোয় কেন এরকম হলো সেগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে।’ রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি যাতে সচল হয় সে জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যেই বৈঠক হয়েছে। দ্রুতই নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হবে।