ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান বিরোধে ‘শাটডাউনের’ মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:৫০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় তহবিল জোগাড়ের জন্য উত্থাপিত অন্তর্বর্তী ‘ফান্ডিং বিল’ নিয়ে একমত হতে পারেননি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা। ফলে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ বা ‘শাটডাউনের’ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল বুধবার জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাজ চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দ করতে হয় প্রতি অর্থবছরে। কোনো কারণে কংগ্রেস যদি ব্যয় বিল পাস করতে ব্যর্থ হয় বা প্রেসিডেন্ট সেই বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, তখনই ঘটে ‘শাটডাউন’। যদিও এবারের শাটডাউনের জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। ফলে যত দিন পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে অর্থ বরাদ্দ না করা হচ্ছে, তত দিন দপ্তরগুলো বন্ধ থাকবে। 

এদিকে কংগ্রেসে ব্যয় বিল পাস না হওয়ায় সরকারি কার্যক্রমে শাটডাউন শুরু হয়েছে। অর্থ্যাৎ, বেশ কিছু সরকারি দপ্তরের সেবাদান বন্ধ হয়ে গেছে। এসব দপ্তরের কর্মীদের অবৈতনিক ছুটিতে থাকতে হবে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হতে শুরু করে। এটি কত দিন চলবে তা এখনো জানা যায়নি। সাত বছর আগেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই শাটডাউন ছিল সবচেয়ে দীর্ঘতমÑ ৩৫ দিন। আইনপ্রণেতারা পুরো বছরের জন্য ব্যয় পরিকল্পনা পাস করতে ব্যর্থ হলে অনেক সংস্থা ও দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। তবে জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো চালু থাকে। যেমনÑ জাতীয় নিরাপত্তা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা। 

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, যেহেতু কংগ্রেসে ব্যয় চালানোর বিল পাস হয়নি, তাই শাটডাউন না কাটা পর্যন্ত কিছু দপ্তরের কর্মীরা বেতন পাবেন না। এ ক্ষেত্রে লাখো কর্মী ছাঁটাইও হতে পারেন। অর্থ বিলে বিরোধী দল ডেমোক্রেটরা স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাড়তি ভর্তুকি দাবি করেছিল। কিন্তু তা নাকচ করে রিপাবলিকানরা। ফলাফল বিলটি নিয়ে যখন সিনেটে ভোটাভুটি শুরু হয়, তখন উভয় পক্ষ একে অপরের প্রস্তাব আটকে দেওয়া শুরু করে। বিল পাসের জন্য রিপাবলিকানদের অন্তত ৬০টি ভোট দরকার ছিল। কিন্তু তারা পায় ৫৫টি। এএফপি বলছে, অচলাবস্থা তৈরির কারণে বেশি ভুক্তভোগী হতে পারেন ডেমোক্রেট সমর্থকেরা। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিল পাস না হলে তিনি দপ্তরগুলো থেকে ডেমোক্রেট সমর্থকদের ছাঁটাই করবেন।

১০০ সদস্যের মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানের সংখ্যা ৫৩। যে কোনো বিল পাস করাতে অন্তত ৬০টি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে সাত জন ডেমোক্রেট সদস্যের সমর্থন তাদের প্রয়োজন ছিল। বিলটি ৪৭-৫৩ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। আর সে কারণে সিনেটের অনুমোদনও মেলেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ব্যয় বাজেট গঠনকারী ১২টি বিলের কোনোটিই এখনো আইনসভার দুই কক্ষে পাস হয়নি। ফলে শাটডাউনটি হতে চলেছে ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’। শাটডাউনে মার্কিন সরকারের অধিকাংশ দপ্তরের কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। চালু থাকবে কেবল জরুরি পরিষেবাগুলো। কোন কোন দপ্তর চালু থাকবে, কতজন কর্মীকে নিয়ে চলবে, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হয়। যারা শাটডাউন চলাকালীন কাজ করবেন, তাদের অধিকাংশই বেতন পাবেন না। ‘শাটডাউন’ শেষ হলে আবার তাদের বেতন দেওয়া হবে। এ ছাড়া শাটডাউনের প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য দপ্তরে। জরুরি পরিষেবা চালু থাকলেও অনেক কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো কোনো কাজ পিছিয়ে যেতে পারে বা সাময়িকভাবে বন্ধও হতে পারে।

মার্কিন শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, অধিকাংশ কর্মীকেই আপাতত বসিয়ে রাখা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চালু থাকবে। শুল্ক এবং সীমান্তরক্ষা দপ্তরের কর্মীদেরও কাজ করতে হবে। এ ছাড়া শাটডাউনের মধ্যেও অভিবাসন, পরিবহন নিরাপত্তা, সিক্রেট সার্ভিস, নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার কাজ চালু থাকবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরে বাছাই করা কিছু অংশ খোলা রাখা হবে। তার মধ্যে দক্ষিণ সীমান্ত, পশ্চিম এশিয়া এবং গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অগ্রাধিকার পাবে বলে দপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী এবং অন্যদের মার্কিন সরকারের তরফ থেকে যে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দেওয়া হয়, তা বন্ধ হচ্ছে না। 

হোয়াইট হাউস থেকে শাটডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি স্মারক প্রকাশ করা হয়েছে। এতে যেসব সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের নিজেদের পরিকল্পনা তৈরির জন্য বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার এমন শাটডাউনের ঘটনা ঘটেছে। এটি এক থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সময়ে কম সময়ের জন্য হলেও আটবার এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু ৯০-এর দশকে এসে এমন শাটডাউনের সময় বেড়েছে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে দুবার এমন ঘটনা ঘটল।

ডেমোক্রেটদের দাবি, তাদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। রিপাবলিকানদের অভিযোগ, ডেমোক্রেটরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শাটডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে, তা এখনো অস্পষ্ট।