কারা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) চায়, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশেই ছিলাম। এর আগেও বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা এসেছে, ওই সব ঝড়-ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশে থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশে কাটিয়ে যাব।’
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে এখন সেফ এক্সিটের কথা ভাবছে’Ñ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এই মন্তব্যের ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি যেটুকু দেখতে পাই খোলা চোখে সেটা হচ্ছে, সব রাজনৈতিক দলের মতো এই নবগঠিত রাজনৈতিক দলের (এনসিপি) সঙ্গে সরকারের ভালো একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ আছে। এটা উনি অভিমান থেকে বলেছেন, নাকি কোনো একটা ব্যাপারে ওনার গ্রিভেন্স আছেÑ এই বিষয়গুলো পরিষ্কার ওনাকে করতে হবে। উনি যদি কখনো কোনো বিষয় পরিষ্কার করেন, তখন সেটা নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। তার আগে তো সরকারের বক্তব্যের কোনো সুযোগ নেই।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা নানা বিষয়ে নানা কথা বলে যাচ্ছেন, সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে। এটা বলা তাদের তো অধিকার! এটাই তো গণতন্ত্রের চর্চা। প্রতিটা বিষয় নিয়ে আমরা যদি প্রতিক্রিয়া দেখাই, প্রতিটা বিষয় নিয়ে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো আমরা কখন চালাব?’
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘যখন কোনো একটা বিষয় আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে, তখন অবশ্যই সরকার সে বিষয় নিয়ে কথা বলবে। সে বিষয় নিয়ে কাজ করবে, এনগেইজ হবে, সবাইকে জানাবে। অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না। তাকে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। তার বক্তব্য তো আমার সাবস্টেনশিয়েট করার বিষয় না। আমার খ-ানোরও বিষয় না। বক্তব্য সুনির্দিষ্ট হলে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলা হতো। এটা হয়তো তাদের ধারণা, তারা মনে করে, তাদের বক্তব্য হিসেবে বলেছে। এখানে সরকারের অবস্থান নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। সরকারের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে করি না। সংস্কার, বিচার চলমান প্রক্রিয়া। বিচার নিজস্ব গতিতে চলছে। বিচার কীভাবে চলছে, সেটি সবাই দেখতে পাচ্ছে। বিচারের ক্ষেত্রে সরকার তার অঙ্গীকার দেখিয়েছে। যখন দেখেছি একটি ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ বেশি হয়ে যায়, তখন আরেকটি ট্রাইব্যুনাল বাড়ানো হয়েছে। বিচারকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ এগিয়ে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিচার অবশ্যই চায় এবং অবশ্যই সুবিচার নিশ্চিত করতে চায়। সে জন্য যে পদ্ধতি করা প্রয়োজন, সেটি করা হচ্ছে।’
রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক বড় বড় বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। সংস্কারকেন্দ্রিক যেসব বিষয়ে ঐকমত্য, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বাস্তবায়নের বিভিন্ন অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দু-একটি অপশনে রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সমর্থন দিচ্ছে। রাজনৈতিক পদ্ধতিতে কিছু প্রশ্নের সমাধান চাইলে সেখানে আপস-ডাউন থাকবেই। সবাই আলোচনায় বসছেন, মতামত দিচ্ছেন। পরিবর্তন কীভাবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক ডিবেট থাকবেই।
তবে সেটি নিয়ে আশঙ্কিত-আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, চাপিয়ে দিলে কোনো কিছু টেকসই হবে না। চাপিয়ে না দিয়ে যেটুকু সবাই একমত হবে, করতে চাইবে, সেদিকেই যাব। রাজনৈতিক আলোচনায় তাপ-উত্তাপ থাকবেই, একমত থাকবে; সবই স্বাভাবিক। সরকার আগে থেকে বলতে পারবে না কখন বিচারের রায় হবে। শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এটি বলা যাবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সরকার প্রথম থেকেই বলছে স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। জনগণ যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, সেই নির্বাচন চায়। জনগণের অংশগ্রহণের পথে যেন কোনো কিছু অন্তরায় না হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে সরকার। নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা-না-করার বিষয়টি আইনি হতে পারে। অংশগ্রহণ করা-না-করার বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুযায়ী মীমাংসিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন করবে নাকি ছোট আকারে নির্বাচনকালীন সরকার হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনো কথা শোনেননি। এই অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচন করবে। এখন পর্যন্ত এটাই অবস্থান।