রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম

বিয়ের উপহার ১৫০০  গাছের চারা লাগানো  হলো পদ্মার চরে

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম

বিয়ের উপহার ১৫০০  গাছের চারা লাগানো  হলো পদ্মার চরে

‘কাঁকড়া’ নামের গাছটি শুধু সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। সুন্দরবনের এই গাছের চারা রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে লাগানো হয়েছে। কাঁকড়া ছাড়াও লাগানো হয়েছে সুন্দরী, পশুর, খালিশা ও বাইনগাছের ১ হাজার ৫০০ চারা। এই চারাগুলো বিয়েতে উপহার পেয়েছিলেন রাজশাহীর মেয়ে তথাপি আজাদ। এত গাছ লাগানোর মতো নিজের জায়গা নেই তথাপির। তাই জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চারাগুলো লাগানো হয়েছে পদ্মার চরে।

তথাপি আজাদের বাড়ি রাজশাহী মাহনগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। তিনি রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের ছোট মেয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তথাপি। গত ৩ অক্টোবর তার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিয়েতে পাওয়া অনেক উপহারের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল সুন্দরবনের দেড় হাজার গাছের চারা। আর তাকে এমন উপহার দিয়েছেন রাজশাহীর ‘মৌমাছি ও মধু পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠাতা আকমাল মাহমুদ, চট্টগ্রামের মধু গবেষক সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার ও ‘চাঁপাই আমবাগান’-এর উদ্যোক্তা প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিন।

গত শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গাছগুলো মহানগরীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চসংলগ্ন পদ্মার চরে রোপণ করা হয়। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোয়ালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, মঈনুল আনোয়ার সুন্দরবন থেকে ভেসে যাওয়া বিভিন্ন গাছের বীজ সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে চারা তৈরি করেন। এভাবে তিনি নিজের বাড়িতে ‘এক টুকরো সুন্দরবন’ নামের একটি বাগানও করেছেন। গাড়ির টিকিট না পেয়ে তিনি সশরীরে তথাপির বিয়েতে আসতে পারেননি। তবে কুরিয়ার করে আকমাল মাহমুদের ঠিকানায় গাছগুলো পাঠান। তথাপি শুক্রবার সকালে গাছগুলো হাতে পান। গাছগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ২০০ সুন্দরী, ২০০ কাঁকড়া, ১০০ পশুর, ১ হাজার খালিশা ও ২০টি বাইন। ওই দিন বিকেলে রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায় পদ্মার চরে গড়ে ওঠা বনভূমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আকমাল মাহমুদ তথাপি আজাদের হাতে তার বিয়ের উপহার হিসেবে গাছের চারা হস্তান্তর করেন।

তথাপি একটি গাছের চারা রোপণ করে এই বিশেষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তারপর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন আরেকটি সুন্দরীগাছের চারা রোপণ করেন। উপহার হিসেবে গাছ গ্রহণ করার সময় তথাপির বাবা আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও স্বামী হাসিবুল আলম কাজলও ছিলেন। তারাও চারা রোপণ করেন। দেড় হাজার চারাগাছ নিয়ে রাজশাহীর এই পদ্মার চরে ‘এক টুকরো সুন্দরবনের’ ছোঁয়া পাওয়া যায়।

সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী গ্রিন সিটি হিসেবে পরিচিত। উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। তথাপির বিয়ে উপলক্ষে মৌমাছি ও মধু পাঠশালা যে উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাতে সহযোগিতা করেছি।’

তথাপির বাবা আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলেন, ‘মেয়ের বিয়েতে এত গাছ পেয়ে আমি অভিভূত। এত গাছ লাগানোর জায়গা না থাকায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পদ্মার চরে রোপণ করা হয়েছে। যারা গাছ দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

বিয়ের উপহার হিসেবে সুন্দরবনের গাছ পেয়ে তথাপি আজাদ বলেন, ‘বিয়েতে অনেক উপহার পেয়েছি, কিন্তু গাছের মতো উপহার অনন্য। এই গাছগুলো আমার বিয়ের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে। গাছগুলো বড় হলে বলবÑ এগুলো আমার বিয়ের স্মৃতি।’

তথাপির স্বামী হাসিবুল আলম কাজল বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, গাছ আমাদের জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিয়েতে এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।’

চট্টগ্রামের আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার বলেন, ‘আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ আমার খুবই আপন মানুষ। তার মেয়ের বিয়েতে চিন্তা করেছি, সবাই তো উপহার দেবে। সেগুলো হয়তো ক্ষয় হয়ে যাবে, এমন একটি উপহার দিই, যেটা যুগ যুগ ধরে থাকবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমার আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে। আমি এর মাধ্যমে সুন্দরবনের গাছের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করি। তথাপি নতুন জীবন শুরু করছে। তার নতুন জীবনটা সুন্দর হোক। গাছ লাগানোর মতো একটা বৃহৎ মহৎ কাজের মাধ্যমে জীবনটা সুন্দর হোক। তথাপির জীবনটা সুন্দর ও সবুজময় হয়ে উঠুক।’ 

উপহার হিসেবে সুন্দরবনের গাছ দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা, এই সুন্দরবনের গাছের চারা যদি আমি সারা দেশে বিলি করতে পারি, তাহলে সুন্দরবনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি হবে। সুন্দরবন কিংবা গাছের ব্যাপারে মানুষের একধরনের সম্পর্ক তৈরি হবে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!