মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

বিবিএসের জরিপ

প্রতি চারজন নারীর তিনজনই সহিংসতার শিকার

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

প্রতি চারজন নারীর তিনজনই  সহিংসতার শিকার

বাংলাদেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজন তাদের জীবনে অন্তত একবার সহিংসতার শিকার হয়েছেনÑ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ চিত্র। গতকাল সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে, ৭৬ শতাংশ নারী কখনো না কখনো জীবনসঙ্গী বা স্বামীর দ্বারা শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনকি ৪৯ শতাংশ নারী গত এক বছরেই এ ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলোÑ এই সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ কখনো তা প্রকাশ করেননি।

বিবিএস জানিয়েছে, জরিপে জাতিসংঘের নির্ধারিত সহিংসতার ধরন ছাড়াও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক আচরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১৫ বছর বয়সের পর ১৫ শতাংশ নারী নন-পার্টনার বা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং ২ দশমিক ২ শতাংশ নারী নন-পার্টনার কর্তৃক যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের জরিপ। এর মাধ্যমে আমরা সহিংসতার ব্যাপকতা, প্রভাব ও প্রবণতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছি, যা ভবিষ্যৎ নীতি প্রণয়নে দিকনির্দেশনা দেবে।’ তিনি জানান, ভবিষ্যতে নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহে বিবিএসের সক্ষমতা আরও জোরদার করা হবে।

যদিও ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছেÑ তখন স্বামী দ্বারা সহিংসতার হার ছিল ৬৬ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে। তবুও জরিপটি দেখায়, নারীদের জীবনে সহিংসতার প্রভাব এখনো গভীর। সহিংসতার পরও চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা নিতে অধিকাংশ নারী দ্বিধান্বিত থাকেন। ক্ষতিকর সামাজিক রীতিনীতি ও সম্মানহানির ভয়ে অনেকেই নীরব থাকেন।

জরিপে আরও দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় স্বামীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকারদের ৬০ শতাংশই গত এক বছরে একাধিকবার এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। গর্ভাবস্থাতেও সহিংসতা থেমে থাকেনি। ৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী শারীরিক ও ৫ দশমিক ৩ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

নন-পার্টনার সহিংসতার ঘটনায় শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে, যৌন সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটেছে পরিচিতজনদের দ্বারাÑ যেমন আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত পুরুষের মাধ্যমে। জরিপে আরও দেখা গেছে, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে যৌন ব্ল্যাকমেইল, ছবি অপব্যবহার এবং ডিজিটাল নজরদারি।

সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। স্বামীর দ্বারা সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা স্থানীয় নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। অন্যদিকে, নন-পার্টনার সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং তাদের বেশির ভাগই পুলিশের সহায়তা নিয়েছেন।

জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতি দুইজন নারীর মধ্যে একজনেরও কম (৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ) জানেন কোথায় অভিযোগ জানাতে হয় এবং মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী হেল্পলাইন ‘১০৯’ সম্পর্কে জানেন। সহিংসতার মূল কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও শহুরে বস্তিতে বসবাস নারীদের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মিসেস আলেয়া আক্তার ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মুস্তারি।

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, এই পরিসংখ্যানগুলো বাংলাদেশের নারীর বাস্তব চিত্র প্রকাশ করছে। হাজারো নারী সাহস করে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা আমাদের জন্য নীতি প্রণয়নের শক্ত ভিত্তি। এখন প্রয়োজন সহিংসতা প্রতিরোধ, সার্ভাইভরদের সহায়তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ। 

অনুষ্ঠানে আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় উইমেন’স অ্যাফেয়ার্স রিফর্ম কমিশনের চেয়ারপারসন শিরীন হক, এসপিবিএনের ডিআইজি ড. শোবে রিয়াজ আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার অংশ নেন। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!