মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতাসহ তিন দাবিতে নতুন কর্মসূচি হিসেবে আজ রোববার শিক্ষা ভবন অভিমুখে ভুখা মিছিল করবেন শহিদ মিনারে আমরণ অনশনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা শতভাগ দাবি না মেনে কোনো আপস করার চেষ্টা করলে তার পদত্যাগের ডাক আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া গতকাল শনিবার দাবি আদায়ে টানা সাত দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষকেরা কালো পতাকা মিছিল করেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘মৃত্যুর শপথ নিয়ে শিক্ষকেরা শহিদ মিনারে এসেছি। ২০ শতাংশ মানে, ২০ শতাংশই। ১ হাজার ৫০০ টাকা মানে, ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৭৫ শতাংশ মানে, ৭৫ শতাংশ। কোনো টালবাহানা চলবে না। দাবি আদায়ে আগামীকাল (আজ) দুপুর ১২টায় শিক্ষা ভবন অভিমুখে থালা-বাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করব আমরা।’
এর আগে গতকাল শনিবার দুপরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে অনশনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা কালো পতাকা মিছিল বের করেন। মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে কদম ফোয়ারা চত্বরে আসে। কদম ফোয়ারায় এই সমাবেশে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকেরা কোনো দুর্নীতি করেন না, দুর্নীতি করেন আমলারা। আমলাদের গাড়ি-বাড়িসহ যাবতীয় সুবিধা রয়েছে। আর শিক্ষকেরা সামান্য অধিকার আদায়ে প্রচ- গরমে রাস্তায় আন্দোলন করছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’
গণঅধিকার পরিষদের অবস্থান তুলে ধরে রাশেদ খান জানান, ‘আমলাদের চেয়ে শিক্ষকদের বেতন বেশি হওয়া উচিত। শিক্ষকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদ তাদের পাশে থাকবে। শিক্ষকদের সঙ্গে ওই সচিবালয় ঘেরাও করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আপনাদের দাবি আদায় করতে যদি যমুনা ঘেরাও করতে হয়, গণঅধিকার পরিষদ আপনাদের সহযোগিতা করবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোনো চিন্তা আমাদের নেই। আমাদের কর্মসূচির ধরন দেখে আপনারা সেটা বুঝতে পারছেন। কিন্তু সরকারের প্রতি এই সহযোগিতাকে যদি দুর্বলতা মনে করা হয় আর শিক্ষকেরা যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন, তাহলে প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনার কোনো বাহিনী দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, বিগত সময়ে অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে এমপিওভুক্তি নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘যদি তারা টাকার মাধ্যমে এমপিওভুক্তি নেয়, তাহলে কোন কোন আমলা টাকা খেয়ে এই এমপিওভুক্তি দিয়েছেন, তাদের অবিলম্বে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
গত রোববার থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান, সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ ও শাহবাগ মোড় অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এতে অংশ নেন
কয়েক শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। এর মধ্যে অনশনরত অন্তত ১০ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীতে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকেরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন