নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি ও যুবদলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার মেঘনা নদীর চরাঞ্চল কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের খালিয়ারচর পশ্চিম পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে উভয় পক্ষের আহত ২২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মতিন (৫০), জমির আলী (৫০), রাফি মিয়া (২৪), খায়ের উদ্দিন (৪২), জোনায়েত মিয়া (২৫), কালু মিয়া (৩৭), খলিলুর রহমান (৪০), আল আমিন (২৫), রশিদ মিয়া, (৫০), মনির হোসেন (৩৫), মজিবুর রহমান (৫০), সালাউদ্দিন মিয়া (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৫), শুভ মিয়া (২৫), জুনায়েদুর রহমান (২৫), রাজীব মিয়া (১৫), আহাদ মিয়া (১৮), তামিম মিয়া (১৪), আবদুর রহিম (৪৫), আলমগীর হোসেন (৪২), স্বপন মিয়া (৪০) ও আমির আলী (৬০)।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মতিন, খায়ের, জোনায়েত, কালু, খলিলুর ও আল আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যরা আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ফকির জহিরুল ইসলামের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি কবির হোসেনের অনুসারীদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই নেতা নিজেদের প্রভাব বাড়াতে নিজ বলয়ে নতুন লোকজন ভেড়াতে শুরু করেন। এ সময় উভয় পক্ষই একে-অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসনের অভিযোগ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি গ্রামের একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে পুরোনো বিরোধ বাড়তে থাকে। সেই বিরোধের জেরে গত শুক্রবার বিকেলে জহিরুল ও কবিরের অনুসারীদের মধ্যে বাগ্বিত-া হয়। এরপর আজ খালিয়ারচর পশ্চিম পাড়া গ্রামের ফকির বাড়ি জামে মসজিদের সামনে উভয় পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন স্থানীয়রা। তবে কে বা কারা গুলি ছুড়েছেন, জানা যায়নি।
এ বিষয়ে যুবদলের নেতা ফকির জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামিদের শেল্টার দিচ্ছে কবিরের লোকজন। তারা মামলায় জামিন না নিয়েই এলাকায় ঘোরাফেরা করলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাধা দেন। এর জেরে এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে কবিরের লোকজন। এলাকাবাসী তখন প্রতিরোধ করে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা কবির হোসেন বলেন, ‘বিনা উসকানিতে আমার অনুসারীদের ওপর হামলা করে জহিরুলের লোকজন। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’
সংঘর্ষের ঘটনায় রাত আটটা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী ইসলাম। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন