দুই দিনের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তালেবান সরকার। হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আফগান কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু ও তিন ক্রিকেটারও রয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। গত শুক্রবার রাতের দিকে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের একাধিক স্থানে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের আলাদা আলাদা হামলায় আফগানিস্তানে প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। গত শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ১টায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুই দেশের কূটনীতিকেরা জানান, উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হন। এদিকে তিন ক্রিকেটার নিহতের ঘটনায় আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সিরিজটি ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে এসিবি বলে, ‘এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় উরগুন জেলার তিন ক্রিকেটার কবির, সিবঘাতুল্লাহ, হারুনসহসহ আরও পাঁচজন আফগান নাগরিক শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন সাতজন। তারা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পর এক সমাবেশে তাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।’
এসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকতিকা প্রদেশের আরগুন জেলার সাহসী ক্রিকেটারদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছে, যারা সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলার শিকার হয়েছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এটিকে আমরা একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে দেখছি। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
হামলার নিন্দা জানিয়ে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক রশিদ খান। এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নারী, শিশু এবং সেই তরুণ ক্রিকেটারদের প্রাণহানি, যারা বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেছিল, তা এক মর্মান্তিক ঘটনা।’
রশিদ খান আরও বলেন, ‘মূল্যবান নিরীহ প্রাণহানির আলোকে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। এই কঠিন সময়ে আমি আমাদের জনগণের পাশে আছি; জাতীয় মর্যাদা সবকিছুর ওপরে থাকতে হবে।’
শোক জানিয়ে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উরগুন জেলার সেই সাহসী ক্রিকেটারদের মৃত্যুর খবর শুনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া এই ঘটনা শুধু পাকতিকার নয়, বরং পুরো আফগান ক্রিকেট পরিবার ও জাতির জন্য এক বিশাল বেদনা। এই নিরীহ খেলোয়াড়দের পরিবার, বন্ধু ও পাকতিকার জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।’
এদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির তালেবান শাসকদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানো ‘প্রক্সি সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অ্যাবোটাবাদ শহরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে পাসিং-আউট প্যারেডে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এ সময় সেনাপ্রধান মুনির আফগানিস্তানের জনগণের প্রতি ‘সহিংসতার পরিবর্তে পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তার’ পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে হামলার পর গতকাল শনিবার রাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা কাতারে বৈঠকে বসার কথা ছিল। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দোহায় পৌঁছায়। পাকিস্তানও জানিয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল আসিম মালিক আলোচনায় যোগ দেবেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন