রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

ভূমি সংস্কার বোর্ডে আউটসোর্সিং কর্মচারী

বছরের পর বছর বেতনহীন জীবন

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

বছরের পর বছর বেতনহীন জীবন

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূমি সংস্কার বোর্ডে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপাপ্ত ১৩৮ জন কর্মচারীর বেতন বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পড়ে আছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৬৯ জন, চাঁদপুরে ৩৪ জন ও কুমিল্লায় ৩৫ জন। তাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারছে না, পাচ্ছেন না চিকিৎসা সেবা, কেউ আবার ধারদেনায় জর্জরিত। দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেতন না পেয়ে কর্মচারীরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন পাঠিয়েছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট অনুমোদন না দিলে পথে বসা এ কর্মচারীদের অনেক পরিবারের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।

পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেতনহীন সেবা

কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের আবেদনে জানানো হয়েছে, আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ভূমি অফিসে ৬৯ জন অফিস সহায়ক ও একজন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ পেয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় চাঁদপুরে ৩৪ জন ও কুমিল্লায় ৩৫ জন রয়েছেন। তাঁরা নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করলেও কুমিল্লায় ৮৪ মাস, চাঁদপুরে ৮০ মাস ও ময়মনসিংহে ৭১ মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। অথচ এ সময়ের মধ্যে সরকারি ফাইল, নথিপত্র ও মাঠপর্যায়ের অফিসের দৈনন্দিন কাজ তাদের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিস রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই কর্মচারীরা বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু টাকা-পয়সা কিছুই পাচ্ছেন না। অনেকে এখন আর সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না, কারো কারো ঘরে তিন বেলা খাবার জোটে না। প্রায় সবাই সুদে টাকা নিয়ে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছেন। এটা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, মানবিক এক বিপর্যয়।

জেলা প্রশাসকের সুপারিশ, তবুও অর্থ ছাড় হয়নি

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পত্র পাঠিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের সেই পত্রে বলা হয়েছে-আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত কর্মচারীদের সেবামূল্য পরিশোধ ও নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একইভাবে কুমিল্লা ও চাঁদপুরের  জেলা প্রশাসকরাও চিঠি দিয়েছেন।

কিন্তু ভূমি সংস্কার বোর্ড গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে জারি করা এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, উপজেলা ভূমি অফিসগুলোর জন্য ‘৩২১১১৩১’ কোডে নিরাপত্তা ও পাহারা সেবার বরাদ্দ থাকলেও অফিস সহায়কদের বেতন প্রদানের জন্য কোনো অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদিত হয়নি। অর্থাৎ, এই কোডের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় ৬৯ জন কর্মচারীর বেতন প্রদানের দায়িত্ব কে নেবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি তারা জেনেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। এখন ভূমি সংস্কার বোর্ড ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে একটা চিঠি দিবে। এরপর অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তার আগে এই বিভাগের কিছু করার নেই। তবে তাদের বকেয়া দ্রুত ছাড় করা প্রয়োজন বলেও অর্থ বিভাগ মনে করে বলে জানিয়েছে।

ভূমি সংস্কার বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এসব আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন বকেয়া হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে দীঘ দিন ধরে তাদের কোনো ঠিকাদার নেই। তা ছাড়া আউটসোর্সিং নিয়োগও বন্ধ রয়েছে। তাই এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। এখন অর্থ বিভাগ উদ্যোগ নেওয়ায় সমস্যার সমাধান হতে পারে।

পরিবারের অসহায় অবস্থার বর্ণনা

এই কর্মচারীদের অনেকে জানিয়েছেন, বেতন না পেয়ে তাদের জীবন চরম দুঃসহ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ সুদে ধারকর্জ করে সংসার চালাচ্ছেন, কেউ আবার বাচ্চার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছেন। নিজেদের পরিচয় জানাজানি হলে সমাজে আরও কোনঠাসা হয়ে যেতে পারেন, এই শঙ্কায় তাদের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন।

গফরগাঁও উপজেলার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন অফিসে যাই, কাজ করি কিন্তু পাঁচ বছর ধরে কোনো টাকা পাই না। ঘরে বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিতে পারি না। লোকজনের কাছে ধার করে দিন চলে। এখন আর কেউ ধারও দেয় না।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার আরেক কর্মচারী বলেন, স্ত্রী অসুস্থ, ওষুধ কিনতে পারি না। ছোট মেয়েটা স্কুলে যেতে পারে না। এতদিন ধরে কাজ করছি, কিন্তু এক টাকাও পাইনি। এখন মনে হয় চাকরিটাই অভিশাপ।

মানবিক সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতা

বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক নুর বলেন, এরা সরকারিভাবে অনুমোদিত আউটসোর্সিং কর্মচারী। জেলা প্রশাসকের প্রত্যয়নপত্র, উপস্থিতির তালিকা সবই আমরা দিয়েছি। তবুও অর্থ ছাড় হচ্ছে না। এটি শুধু প্রশাসনিক নয়, মানবিক এক সংকট।

সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় যেন জরুরি ভিত্তিতে বাজেট অনুমোদন দিয়ে ভূমি সংস্কার বোর্ডের বাজেট শাখা-৪ অথবা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেয়।

তারা সতর্ক করেছেন, এই বিলম্বিত অর্থ পাওয়া না গেলে মাঠপর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোতে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

প্রশাসনিক অচলাবস্থার আশঙ্কা

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে অফিস সহায়ক, কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দ জটিলতা, বাজেট অনুমোদনে বিলম্ব ও দাপ্তরিক দ্বন্দ্বের কারণে বহু ক্ষেত্রেই এসব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। ফলে, মাঠপর্যায়ে সরকারি অফিসের কার্যক্রমে একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!