আমাদের শরীরের কিডনির মতোই গড়ন এর। কৃত্রিম হলেও কাজ করবে দ্রুত। আর তা দিয়েই কিডনির কাজটা হয়ে যাবে। নকল সেই কিডনিকে শুধু বসিয়ে দিতে হবে শরীরে। রক্তের গ্রুপ যা-ই হোক না কেন, তা যেকোনো ব্যক্তির শরীরেই সক্রিয় হবে। কৃত্রিম কিডনি তৈরিতে সাফল্য পেয়েছেন কানাডা ও চিনের বিজ্ঞানীরা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনিভার্সাল কিডনি’। বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, এই সাফল্যে বাঁচবে বহু প্রাণ।
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর কিডনি-রোগে কত মানুষ মারা যায়, তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, তবে কিডনি রোগ মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কিডনি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোগের ব্যাপকতা বিশ্বব্যাপী, যেখানে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশের কথা যদি বলি, কিডনিরোগে ভুগছেন দেশে এমন মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখের বেশি। প্রতিবছর দেশে কিডনিরোগে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ মারা যান।
এমন অবস্থায় কৃত্রিম কিডনি নিয়ে গবেষণা বহু বছর ধরেই চলছে। মাঝে পশুর কিডনি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। শূকরের কিডনি মানুষের শরীরে বসানো হলেও তা বেশিদিন টেকেনি। এ দিকে একটি বা দুটি কিডনিই বিকল হয়েছে যে রোগীর, তাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করিয়ে রাখাও যায় না। উপযুক্ত দাতার আশায় দিন গুনতে গুনতে বিপদ আরও বাড়ে। তাই এই সব কিছুর ঝক্কি ঝেড়ে ফেলতে কৃত্রিম কিডনি বানানোর দিকেই ঝুঁকেছেন গবেষকেরা। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার গবেষকেরা জানিয়েছেন, মানুষের শরীরেরই কোষ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম কিডনি। যেকোনো ব্যক্তির শরীরেই তা বসানো যাবে। আপাতত ব্রেনডেথ হওয়া এক রোগীর শরীরে বসিয়ে দেখা গিয়েছে, সেটি দিব্যি কাজ করছে। সব ঠিক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি বাণিজ্যিকভাবে তা বাজারে নিয়ে আসাও হবে।
তলপেটে যেখানে শরীরের দুই পাশে দুটি কিডনি রয়েছে, সেখানেই যেকোনো এক দিকে ওই কিডনি বসিয়ে দেওয়া যাবে। তাকে চালাবে হার্ট থেকে আসা রক্তই। তবে সেই রক্তকে ফিল্টার করে নেবে ওই কৃত্রিম কিডনি। নজর রাখবে শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলোর ক্ষরণ যেন ঠিকমতো হয়। শুধু তা-ই নয়, শরীরে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজও করবে ওই কৃত্রিম কিডনি।
আসল কিডনির সঙ্গে পার্থক্য যেখানে
শরীরের ভিতরেই হিমোডায়ালিসিসের প্রক্রিয়া চলে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আসল কিডনি দুটি বয়ে চলা রক্তস্রোত থেকে শুধুই বিষ বা দূষিত পদার্থগুলোকে ছেঁকে নেয়। কিন্তু কৃত্রিম কিডনির গায়ে আলাদা করে ‘মেমব্রেন’ বা ঝিল্লির স্তর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা যেকোনো রকম টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থকে চিনে নিয়ে তাকে ছেঁকে বার করে দেবে। তার সঙ্গে থাকবে একটি বায়ো-রিঅ্যাক্টরও। সেই বায়ো-রিঅ্যাক্টর বানানো হয়েছে কিডনির সুস্থ, সবল কোষগুলো দিয়ে। সেগুলোই শরীরের স্বাভাবিক ডায়ালিসিস প্রক্রিয়াকে চালু রাখবে।
কিডনির অসুখ চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে ক্রমশ। আর কিডনির সেই অসুখগুলোর জন্য মূলত দায়ী দুটি বিষয়। ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপ। কিডনির অসুখে ভুগে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বারবার ডায়ালিসিস করানো বা কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ সামলানোও সবার সাধ্যের মধ্যে নেই। কাজেই এই সমস্যার সমাধান যদি কৃত্রিম কিডনি দিয়ে হয়, তাহলে প্রাণ বাঁচবে বহু জনের।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন