গ্রিনসিটি ক্লিনসিটির পর এবার দূষিত বাতাসের শহরে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার’র প্রতিবেদনে রাজশাহীর বাতাস প্রতিনিয়ত এখন দূষিত বলে মতামত দেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার রাজশাহীর বাতাস ছিল দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত। কিন্তু ২০১৬ সালেই বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা কমানোয় বিশ্বসেরার খেতাব ছিল রাজশাহী শহরের। ৯ বছরের ব্যবধানে দূষণ বেড়েছে রাজশাহীতে। ফলে গ্রিনসিটি ক্লিনসিটির খেতাব হারাতে বসেছে রাজশাহী। অচিরেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইকিউএয়ার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বাতাসের মান নির্ধারণে একটি তাৎক্ষণিক সূচক তৈরি করে থাকে; যা কোনো নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দিয়ে সচেতন করে। সোমবার দেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে বায়ুর মানসূচক সবচেয়ে বেশি ছিল ১৬৭। তারপরই ছিল খুলনা, ১৫৭। এ ছাড়া রংপুরে বায়ুর মানসূচক ১৩৭, বরিশালে ১১৪, ময়মনসিংহে ১১৩, সিলেটে ৮২ এবং চট্টগ্রামে ৭৩ রেকর্ড করা হয়েছে।
গবেষকরা জানান, বায়ুদূষণের নানা নিয়ামকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ফাইন পার্টিকুলার ম্যাটার। যা পিএম ২.৫ হিসেবে চিহ্নিত। এটি বাতাসে মিশে থাকা অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা, গাড়ি, কলকারখানার ধোঁয়া, ইটভাটা ও নির্মাণকাজ থেকে এই কণার উৎপত্তি হয়। রাজশাহীতে এখনো ইটভাটগুলো বন্ধ। কলকারখানাও তেমন নেই। বায়ুদূষণ করছে যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও শহরজুড়ে চলমান নির্মাণকাজ থেকে তৈরি হওয়া ধূলিকণা। বিশেষ করে বর্তমানে রাজশাহী নগরীতে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়িতে ধূলাবালি তৈরি হচ্ছে। যা বাতাসে মিশে শহরের নির্মল আবহাওয়াকে দূষিত করছে। ফলে দীর্ঘদিনের সুনাম অর্জন করা রাজশাহী শহরের নির্মল আবহাওয়া দূষিতের কাতারে গিয়ে পড়ছে।
এদিকে, রাজশাহীর বাতাসের মান দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হয়ে পড়ার খবরে জরুরি বৈঠক করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কর্মকর্তারা। সেখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্মাণাধীন বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উদ্যোগে নির্মাণাধীন বাসাবাড়ির বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। এ বৈঠকে ধূলিকণা কমানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
রাসিকের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহমুদ-উল-হাসান জানান, ‘আমাদের রাজশাহীর পরিবেশের সুনাম রয়েছে। কিন্তু বাতাসের মান নিয়ে যে খবর এসেছে, এটা দুঃখজনক। এখন শহরে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। সে কারণে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সেখান থেকে ধুলোবালি উড়ে বাতাস দূষিত করছে। পানি ছিটিয়ে এটা কমানো যায় কি না, সে জন্য সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখাকে অবহিত করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শংকর কে রায় বলেন, ‘রাজশাহী নির্মল শহর। রাজশাহীর শহরের দূষণ ঠেকানো খুবই জরুরি। কারণ আবহাওয়া দূষিত হলে জনসাধারণের ওপর গিয়ে এর প্রভাব পড়ে। ফলে জনগণ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে সর্দি, জ্বর, কাশি, ফ্লু, ডেঙ্গুর পাশাপাশি দূষিত বায়ু ফুসফুসের সাথে মিশে শিশু ও বয়ষ্কদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি করে। যা খুবই কষ্টদায়ক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিশিষ্ট পরিবেশবিদ প্রফেসর ড. সারওয়ার জাহান সজল বলেন, রাজশাহী নির্মল বাতাসের শহর। হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তন ও নির্মাণকাজের কারণে বাতাস দূষিত হতে পারে। এ জন্য পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি ও সবুজায়ন প্রয়োজন। পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও সচেতনতা জরুরি বলে মত দেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন