- এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছেÑ দাবি মালিকপক্ষের
- প্রায় ২ কোটি টাকার শীতের পোশাক ছিল বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী
- পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বলছে, তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে আগুনের কারণ
রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের কালশী এলাকায় অবস্থিত বিউটি ফ্যাশন পোশাক কারখানায় গত শুক্রবার রাতে অগ্নিকা-ের ঘটনাকে পরিকল্পিত বলছেন ভুক্তভোগী কারখানার মালিক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অগ্নিকা-ে ছাই হয়ে গেল ছোট ব্যবসায়ীর বড় স্বপ্ন। কারখানার মালিক বিউটি বেগমের দাবি, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, কারখানার ভেতরে কোনো কাজ চলছিল না, বিদ্যুৎসংক্রান্ত কোনো সমস্যা ছিল না, তাই আগুন লাগার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালশী সড়কের একটি ছয়তলা ভবনের ওপরের তলায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবুল কাইয়ুম বলেন, ‘এটি পরিকল্পিত অগ্নিকা- নাকি দুর্ঘটনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে পুলিশও আলাদাভাবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।’
ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ১০টা ১২ মিনিটে খবর পাওয়ার ২৭ মিনিটের মধ্যেই তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে এবং রাত ১২টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আরও প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে হঠাৎ আগুন ও ধোঁয়া দেখা যায়। পরে ৯৯৯-এর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানালে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তবে আগুন ওপরে থাকায় প্রথমে ফায়ার সার্ভিস সরাসরি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারেনি। পরে ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন এনে বাইরে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এরই মধ্যে আগুনে ষষ্ঠ তলার প্রায় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
জানা যায়, ভবনটির প্রথম তিনতলা ব্যবহৃত হতো ‘বিবাহ বাড়ি কমিউনিটি সেন্টার’ হিসেবে, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা ছিল ফাঁকা, আর ষষ্ঠ তলায় ছিল বিউটি ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানা। এখানেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
কারখানাটির মালিক বিউটি বেগম বলেন, ‘আমাদের ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকা-। সাধারণত কোনো স্থানে আগুন লাগলে ফ্লোরের নির্দিষ্ট অংশে আগুন ধরে, কিন্তু এখানে পুরো ফ্লোর একসঙ্গে দাউ দাউ করে জ¦লে ওঠে, যা স্বাভাবিক নয়। আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ফ্লোরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে সন্দেহ করছি, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়েছে। তবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের তদন্তেই জানা যাবে।’
বায়ার সোমা জানান, সেখানে প্রায় ২ কোটি টাকার শীতকালীন পোশাকের মালামাল মজুত ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি একজন বায়ার, সাব-কন্ট্রাক্টে বিভিন্ন কারখানায় কাজ করাই। এই ফ্লোরে আমার প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার শীতের পোশাক ছিল। ৩০ হাজার পিস সম্পূর্ণ এবং আরও ৭ হাজার অসম্পূর্ণ মাল ছিল। গত পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন কারখানা থেকে তৈরি মাল এনে এখানে রেখেছিলাম। এই ফ্লোরের সাড়ে ৪ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গাজুড়ে পুরোটাতেই আমার মালামাল ছড়িয়ে ছিল।’
সোমা আরও বলেন, ‘আগুন লাগার কোনো কারণ নেই, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিয়েছে। ফ্লোরে একটা গেট আছে, কিন্তু কোনো শাটার নেই। বাইরে থেকে চার হাত দূর থেকেই যে কেউ আগুন দিতে পারে। আমি নিশ্চিত, এটা পরিকল্পিত অগ্নিকা-।’
গতকাল শনিবার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপপরিচালক (ঢাকা) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আগুন ষষ্ঠ তলায় লাগার পর আমরা দ্রুত অ্যারিয়াল ল্যাডার ও স্ট্যান্ড পাইপ ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি, যাতে এটি নিচের তলায় বা আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে না পড়ে।’
ওই ফ্লোরে কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সেখানে কিছু কাগজপত্র, পুরোনো ফার্নিচার ও কিছু জুট কাপড় ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত নই এটি আসলেই কোনো পোশাক কারখানা ছিল কি না। কারণ আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তদন্ত কমিটি কাজ করবে।’

