ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন সালাহউদ্দিন

সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ফোরাম নির্বাচিত সংসদ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০১:৪২ এএম

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে সুনির্দিষ্ট ফোরাম বলে মন্তব্য করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই হচ্ছে, জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক সমঝোতার একটি ঐহিতাসিক পূর্ণাঙ্গ দলিল। যা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সেই বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ফোরাম হচ্ছে একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এখানে কোনো দলের সেই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সেই জাতীয় সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যাতে জাতীয় সংসদ বাধ্য থাকে সেই একটা আইন ভিত্তি করতে এখন সেই প্রস্তাব জাতীয় সংসদের কাছ থেকে প্রস্তাব অথবা সুপারিশ সরকারের কাছে দেওয়া। সেই সুপারিশটা দেওয়ার পরেই আমরা জানতে পারবÑ কি প্রক্রিয়ায় সেই আইনটা রচনা করতে চাচ্ছে।’

সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেন কোনোভাবেই আইনানুগ প্রক্রিয়ার বাইরে না যাই, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরে না যাই। আমরা যেন এই জাতিকে একটি সুষ্ঠু নিয়মতান্ত্রিক ধারার মধ্য দিয়ে পরিচালনা করি। কারণ অনেকেই আবেগের বশবর্তী বলে থাকেন যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে সে অভিপ্রায়ের অবনতি ঘটবে বলে অনেক কিছু বৈপ্লবিক আদেশ জারি করা যায়, এই বক্তব্য হচ্ছে আবেগের বক্তব্য। কারণ জনগণের অভিপ্রায়কে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা সবাই সংবিধানের আশ্রয় নিয়েছি এবং সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছি এবং এখনো পর্যন্ত আইনানুগভাবে সাংবিধানিকভাবে আমরা এই রাষ্ট্রটা পরিচালনা করছি।’

রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে ও ফারুক খানের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

যা কিছু বৈধতা তা সংসদেই হতে হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এখানে কিছু কিছু বিষয়ের মধ্যে অনেকে বিতর্ক নিয়ে আসেন যে, প্রকৃত সাংবিধানিকতাকে কী রক্ষা করা গিয়েছে? আমরা সবসময় উত্তর দিয়েছি। যতকিছু আমরা সংবিধানের ১০৬-এর মধ্য দিয়ে আমরা বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরও কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের কাছে এমন মনে হয় যে, সংবিধানের কিছু কিছু ধারা বোধহয় এগ্রিগেটেড হয়েছে। কিন্তু সেটার লেজিটিমেসি পরবর্তী পার্লামেন্টে অবশ্যই সরকারের কর্মকা-কে যখন বৈধতা দেওয়া হবে, তখন সেটার সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে ধারণ করে তাকে বৈধতা দেওয়া হবে, রেটিফিকেশন করা হবে, অন্যান্য আইন-কানুন যেগুলো পাস হয়েছে সেগুলো রেটিফিকেশন লাগবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি কোনো না কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকে সেই ব্যত্যয়গুলোকেও বৈধতা দেওয়া হয়ে থাকে। এটাই নিয়ম, এটাই আমাদের ঐতিহ্য এবং সাংবিধানিক ঐতিহ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং আমরা সেই প্রোফাইল নিয়ে যেন আবার এমন কোনো অসাংবিধানিক পদ্ধতির দিকে না যাই যাতে ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠে যে, যার আদেশ জারি করার কথা তিনি করলেন না। যেভাবে আদেশ জারি করার কথা সেভাবে বলো না, সেই আদেশের ভিত্তি যদি আইনানুগ না হয় তাহলে সেই আদেশের আইন কীভাবে রচিত হবে এবং সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে আবার পার্লামেন্টকে নেবে... এই কথাগুলো যেন আমরা বলি।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ যেটা প্রণীত হয়েছে, যেভাবে সবাই স্বাক্ষর করেছেন এবং সেখানে নোট অব ডিসেন্টসহকারে সংক্ষিপ্ত হুবহু এই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগণের সব সম্মতির ভিত্তিতে যখন একটা পার্লামেন্টে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হবে তখন সেই জায়গা থেকে কোনো সংসদ সদস্য এবং সে জাতীয় সংসদ সরতে পারবে না এবং সেইটাই হচ্ছে প্রকৃত জনগণের অভিপ্রায় এবং কনস্টিটিউশন পাওয়ার। জনগণের কনস্টিটিউশন পাওয়ারটা গণভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে বলেই সেই পার্লামেন্ট তার বাইরে যেতে পারবে না। এটার অপর নামই হচ্ছে এই ‘কনস্টিটিউট পাওয়ার’ বা দার্শনিক ক্ষমতা জনগণের সার্বভৌমত্বের অধিকারী হিসেবে আর্টিকেল সেভেন অনুসারে।

এনসিপি প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমার ভাই যারা নতুন রাজনৈতিক দল করেছেন- এনসিপি তাদের অনেক রকমের বক্তব্য আছে যেগুলো আমরা নিজেরাও ধারণ করি। কিন্তু সেগুলোকে একটা বাস্তব রূপ দিতে হবে এবং বাস্তবের নিরিখে কথা বলতে পারি, আমরা যেন এমন কোনো প্রস্তাব না দেই যাতে করে ভবিষ্যতে সেই প্রস্তাবগুলো সে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেউ জুডিশিয়ারের কাছে নিয়ে যেতে চায় এবং সেগুলোর মধ্য দিয়ে যা আমাদের এই টোটাল প্রক্রিয়াটাকে কেউ একসময় অবৈধ বলে যেন আওয়াজ না দিতে পারে। এগুলো আমি আজকের জন্য বলছি না, আগামী পাঁচ বছরের জন্য বলছি না, আগামী ১০ বছর পরে বা ১৫ বছরে যাতে এই প্রশ্নটা নিয়ে কেউ আদালত না যেতে পারে সে রকম একটা ভিত্তি আমাদের এখনই রচনা করতে হবে। আমরা অতি সাবধানে আমাদের অর্জিত যে সাফল্য সেই সাফল্যকে আরও সাফল্যের জন্য সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য সমুন্নত রাখতে হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চাই, আমরা সবাই যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, যে কারণে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে সেইরকম ঐক্য যেন আমরা বজায় রাখি। তার কথায় এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে সামনে ফিরে এগিয়ে চলে চলার একমাত্র শক্তি। আর যদি সেই ঐক্য কোনো কারণে আমাদের মধ্যে নষ্ট হয় তাহলে সেটা ফ্যাসিবাদকে ভিন্নভাবে টেনে নিয়ে আসবে। আমি আহ্বান জানাব, আমরা যেন সেদিকে না যাই আমরা সবাই জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকব একটি প্রশ্নে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, এই প্রশ্নে আমরা এক থাকব। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্যাসিবাদকে যেন আমরা কোনোভাবে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে দেব নাÑ সেই জায়গায় যেন আমরা এক থাকি।’