বর্ষা হোক কিংবা শীত, গভীর রাত হোক বা দুপুর, মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলেই থেমে থাকে না একদল তরুণ। হাতে কোদাল, মনে দায়িত্ববোধ নিয়ে তারা ছুটে যায় কবর খননের কাজে। কারো মৃত্যু তাদের কাছে শুধু শোকের সংবাদ নয়, বরং মানবতার আহ্বান।
মৃত্যুর সংবাদ শুনেই তারা তৈরি করেন দাফনের স্থান, বসার ব্যবস্থা করে দেয় শোকাহত পরিবারের জন্য। বিনিময়ে তারা কিছু চায় না, চায় শুধু পাশে দাঁড়াতে, ভাগ করে নিতে মানবতার দায়িত্ব।
এই মানবিক উদ্যোগের পেছনে আছে বরগুনা সদর উপজেলার তরুণ সংগঠন ‘সোনালী স্বপ্ন যুব সংসদ’। এরা কেউ ছাত্র, কেউ চাকরিজীবী; কিন্তু সবার পরিচয় এক, মানবতার সৈনিক।
সংগঠনের সভাপতি সালমান বলেন, ‘আমরা কোনো পারিশ্রমিক নিই না। মানুষের বিপদে পাশে থাকাই আমাদের উদ্দেশ্য। শিশুর জন্মের সময় যেমন রক্ত দিই, তেমনি মৃত্যুর সময়ও পাশে থাকি।’
অন্ধকার রাত কিংবা ঝড়-বৃষ্টিÑ কিছুই তাদের থামাতে পারে না। কবর খননের কোদাল হাতে, মনে থাকে একটাই বিশ্বাস, ‘মানুষ মানুষের জন্য’।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম অলিউল্লাহ বলেন, ‘এলাকার কেউ মারা গেলে গভীর রাতেও তারা ছুটে আসে। লাশ দাফনের মালামাল নিয়ে হাজির হয়। এমন তরুণদের পেয়ে আমরা গর্বিত। এই প্রজন্মের অনেক তরুণ যেখানে ব্যস্ত মোবাইল ও ইন্টারনেটের জগতে, সেখানে সোনালী স্বপ্ন যুব সংসদের সদস্যরা প্রমাণ করেছেন, মানবিকতার আলো এখনো জ্বলে।’
২০২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি শুধু দাফন কার্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ডেঙ্গু সচেতনতা, দরিদ্রদের ঈদ উপহার বিতরণ, কিশোরীদের ছাতা বিতরণ, খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ আয়োজনসহ বহু জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছে।
সংগঠনের উপদেষ্টা সাংবাদিক এম সোলায়মান বলেন, ‘একটি ছোট কাজ হয়তো একদিনে পৃথিবী বদলে দিতে পারে না, কিন্তু সেটিই পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। ‘সোনালী স্বপ্ন যুব সংসদের’ তরুণরা সেই সূচনাই ঘটিয়ে চলেছেন, অন্যের দুঃখে পাশে দাঁড়িয়ে, নিঃস্বার্থভাবে মানবতার সেবা করে। মৃত্যুর খবর শুনে যেখানে অনেকেই দূরে সরে যায়, সেখানে এই তরুণরা ছুটে যায় দায়িত্ববোধ নিয়ে। সমাজের পরিবর্তন শুরু হয় এমন ছোট ছোট মানবিক উদ্যোগ থেকেই। এই প্রজন্মের যুবকেরা যদি এভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, তবে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর, সহমর্মী ও মানবিক হয়ে উঠবে। এই তরুণদের কাজ শুধু কবর খনন নয়, তারা খনন করছে স্বার্থপরতার দেয়াল, গড়ে তুলছে এক আলোকিত প্রজন্মের ভিত্তি।’

