- আন্দোলনকারীদের একাংশ উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর ছোড়ে
- ট্রেনের হেডলাইট ও কিছু গ্লাস ভাঙচুর এবং কয়েকজন যাত্রী আহত হন
- উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে হামলা
ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথ দেড় ঘণ্টার জন্য অবরোধ করা হয়। অবরোধ চলাকালে নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে আন্দোলনকারীদের একাংশ পাথর নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালায়। এতে ট্রেনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় রেলস্টেশনে জড়ো হয়ে ছাত্র-জনতা রেলপথ অবরোধ শুরু করে। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে এসে আটকা পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সূত্র জানায়, আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আন্দোলনকারীদের একাংশ হঠাৎ উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে বৃষ্টির মতো পাথর ছুড়তে শুরু করে। এ সময় ট্রেনের হেডলাইট ও কিছু গ্লাস ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকজন যাত্রী আহত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে স্টেশন ত্যাগ করে। অবরোধের ফলে বিদেশগামী যাত্রীসহ শত শত সাধারণ ট্রেনযাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অবরোধের আতঙ্কে কালনি এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেসসহ বেশকিছু ট্রেন সময়মতো স্টেশনে পৌঁছাতে না পেরে পার্শ্ববর্তী স্টেশনে অপেক্ষায় ছিল।
ভৈরব ছাত্র ও যুবসমাজের আহ্বায়ক সাইফুর রহমান শাহরিয়ার, ছাত্রদল নেতা জাহিদুল হক হৃদয়, ছাত্রনেতা শেখ মহিউদ্দিন চিশতি পরাগ ও হান্নান হিমুর নেতৃত্বে রেলপথ অবরোধ করা হয়। তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি হাজি মো. শাহিন, উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন সুজন, জামায়াতে ইসলামী ভৈরব উপজেলা শাখার নায়েবে আমির অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মোছা এবং পৌর শাখার সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান মিঠু প্রমুখ।
অবরোধ চলাকালে ভৈরব সার্কেলের এএসপি নয়ন আহমেদ ও ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুহাদ রুহানী, স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ, রেলওয়ে থানার ওসি সাঈদ আহমেদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘রেলপথ অবরোধের কারণে ১০টা ২৫ মিনিটে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে আটকা পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টার মতো ট্রেনটি আটকা ছিল। পরে পুলিশের সহযোগিতায় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
ভৈরব রেলস্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, ‘আন্দোলনের মুখে ট্রেনটি স্টেশনে আটকা পড়ে। আমরা এবং পুলিশ ট্রেনের ওপর ও লাইন থেকে আন্দোলনকারীদের সরাতে চাইলে আন্দোলনকারীদের একটা অংশ ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে। ১১টা ৪২ মিনিটে ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যায়। অবরোধের কারণে কয়েকটি ট্রেন পার্শ্ববর্তী স্টেশনে অবস্থান নেয়। এতে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় হয়।’
এদিকে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার পর ভৈরব ছাত্র ও যুবসমাজের আহ্বায়ক সাইফুর রহমান শাহরিয়ার তাৎক্ষণিক ফেসবুক লাইভে এসে রেলস্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘রেলস্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে কর্মকর্তারাই পাথর নিক্ষেপের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। আন্দোলন বানচাল করতে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। এ ঘটনার দায় আমাদের না।’

