শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

প্রশিক্ষকের সামনেই ডুবে ছিলেন সায়মা, উদ্ধার করতেই ২০ মিনিট পার

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

প্রশিক্ষকের সামনেই ডুবে ছিলেন সায়মা,  উদ্ধার করতেই ২০ মিনিট পার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইন সুইমিংপুলের পানির নিচে ডুবে ছিলেন প্রায় ২০ মিনিট। সেখানে তাকে উদ্ধার করতে ছিল না কোনো উদ্ধারকর্মী। পুলের পাড়ে থাকা দুই প্রশিক্ষক নিজেদের ভেতর করছিলেন গল্প। বিষয়টি নজরে আসার পর তাদের ভূমিকা ছিল বাইরে থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সায়মাকে পুল থেকে উদ্ধার করা। এক ছাত্র ও দুই ছাত্রীর সাহায্যে তাকে ওপরে তোলার পরেই নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন চিকিৎসক। তবে সেখান থেকে রওনা করা অ্যাম্বুলেন্সে ছিল না কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার। আনা হয় জরুরি বিভাগে থাকা সিলিন্ডার। তাতেও ছিল না পর্যাপ্ত অক্সিজেন। সেটি বদলে গাড়ি প্রস্তুত করে রওনা হতেও লেগেছে ৮ মিনিট সময়।

এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মার মৃত্যুর তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যÑ উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের বর্ণনা করে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিয়মানুযায়ী হলগুলোর সাঁতারুদলের জন্য একজন প্রশিক্ষক বাধ্যতামূলক। সব হলে একজন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও সায়মার হলে (মন্নুজান হল) ফাঁকা ছিল সে পদ। এ ছাড়া সায়মা ছিল না সাঁতার প্রতিযোগিতাদলের আনুষ্ঠানিক সদস্য। তবুও তিনি সুইমিংপুলে যান, সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

তিনি বলেন, সেদিন প্রশিক্ষণ ছিল আরও দুটি হলের শিক্ষার্থীদের। সেই হলের দুই প্রশিক্ষক উপস্থিত ছিলেন সুইমিংপুলে। তাদের সামনেই সাঁতারের অনুশীলন করছিলেন সায়মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সাঁতার কাটলেও সবার চোখের আড়ালে হঠাৎ ডুবে যান তিনি। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে পুল থেকে ওপরে তুলতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। ওপরে তুলে তার বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হলেও তার মুখ দিয়ে পানির সঙ্গে খাবার বের হচ্ছিল।

সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সায়মার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এর জন্য তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এ ছাড়া সায়মা শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করত।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশিক্ষক এবং অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সাঁতার কাটার সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং প্রায় ২০ মিনিট পর তার বিষয়টি নজরে আসা প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতা প্রকাশ হয়েছে। পুলে দুইজন মেয়ে সাঁতার কাটছে এবং পাড়ে দুইজন প্রশিক্ষক বসে ছিলেন। তারা নিজেরা গল্প করছিলেন। ওনারা যদি এটা না করতেন, হয়তো তাদের দৃষ্টিতে মেয়েটি থাকতেও পারত। তাই আমরা তাদের প্রশিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া সুইমিংপুল তদারকির জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জরুরি বিভাগে কর্মরতদের অনভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একটি সিলিন্ডারে কতটুকু অক্সিজেন আছে বা নেই, সে সম্পর্কে কর্তব্যরত নার্সদের এবং ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও চর্চা না থাকায় সেখানেও সময় নষ্ট হয়। তবে সায়মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স এবং ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের চেষ্টা ছিল অনেক বেশি। তবে আশঙ্কজনক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছেন। তারা হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন এবং আমরণ অনশন কর্মসূচিতে গেছেন।

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেনÑ রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।

শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনেট ভবনে তাদের বিভাগের শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দেন এবং হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তারা। তাদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং সায়মার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও জনসংযোগ কর্মকর্তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ওই শিক্ষকের এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক আরও ভালোভাবে বলতে পারবেন তার সঙ্গে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না।’

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মার আকস্মিক মৃত্যুতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্তের আশ্বাসে সেদিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা গত তিন দিন প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তিন দিন পেরোলেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় আজ (গতকাল) দুপুর ১২টার দিকে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে আগুন জ্বালিয়ে কর্মসূচি পালন করেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!