দেশের তিন স্টেশনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গুটি চুল খালাস করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া শুল্কহার অনুসরণ না করে ৪০ সেন্টে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, শেরশাহ, যশোর শাখায় গোপনে এলসি খোলা হচ্ছে। এই চক্রে রয়েছে আমদানিকারক আয়ান এন্টারপ্রাইজ এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রিমু এন্টারপ্রাইজ। আমদানি করা গুটি চুল দিয়ে দেশে তৈরি হয় উইগ বা পরচুলা।
এই হিউম্যান গুটি চুল খালাসে নির্ধরিত শুল্ক নির্ধারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউস কমিশনার আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট এসি, ডিসি, জেসি-১, কমিশনার, শুল্কায়ন গ্রুপ-১-এর রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা। বৈঠকটি সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টম্বর মাসের ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একই মাসের ২ তারিখেও আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা কাস্টমস হাউসকে অনুসরণ করে উক্ত স্বনির্ধারণি শুল্ক ধরা হয় ১০ ডলার।
এদিকে এই পণ্য খালাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা কাস্টমস হাউসের এক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর সঙ্গে বেনাপোল ও সোনা মসজিদের দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। আগে ঢাকা কাস্টমস হাউসে ওই ব্যবসায়ী অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নামকাওয়াস্তে ট্যাক্স দিয়ে হিউম্যান গুটি ও লম্বা চুল আমদানি এবং খালাস করত০ বলে জানা যায়।
ভারতীয় শুল্ক ৫২ ডলার নির্ধারণ করা হলেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শেরশাহ, যশোর শাখা মাত্র ৪০ সেন্টে এলসি খুলে দীর্ঘদিন ধরে এই হিউম্যান গুটি চুল আমদানিতে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আমদানিকারক আয়ান এন্টারপ্রাইজ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রিমু এন্টারপ্রাইজের মালিকানায় রয়েছেন একই ব্যক্তি। তার নাম হাদিউজ্জামান। তিনি মিরপুরে বসবাস করে ম্যানেজার মিন্নু ও মিঠুকে দিয়ে বেনাপোলে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুটি চুল প্রতি কেজি ১ হাজার ১৯৯ টাকা হলেও মাত্র ৯৭ টাকা কেজিতে খালাস করে নিয়ে যাচ্ছে এই চক্র।
৪০ সেন্টে এলসি খোলার কথা স্বীকার করে আয়ান এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মিঠু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা এখন থেকে রেট বাড়িয়ে এলসি খুলছি।’ এ বিষয়ে হাদিউজ্জামানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। পরবর্তীতে গত ৩ নভেম্বর দুপুরে তিনি কল দিয়ে জানান, আয়ান এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান হাদিউজ্জামান কথা বলতে নারাজ, উনি তো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ইমপোর্টার নাÑ এ ব্যাপারে ইমপোর্টার জড়িত।’
তবে ম্যানেজার পরিচয়ধারী মিন্নুকে কল করলে তিনি ৪০ সেন্টে এলসি খোলা এবং শুল্ক ফাঁকির কথা অস্বীকার করেন। এ ছাড়া আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক হাদিউজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কৃষি ব্যাংক, শেরশাহ, যশোর শাখার বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার বদলিকৃত সিনিয়র অফিসার অতুনু রায় চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ৪০ সেন্টে এলসি খোলার কথা স্বীকার করেন। ব্যাংকের ফরেন ইনচার্জ প্রিন্সিপাল অফিসার রাকিব হাসান মুন্নার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আগে ৪০ সেন্টে এলসি খোলা হতো, এখন বাড়িয়ে তা প্রতি কেজি দেড় ডলারে খোলা হচ্ছে। আর এটা অনুমোদন দিচ্ছে কৃষি ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারত থেকে হিউম্যান গুটি চুল বাংলাদেশে আমদানি করে উত্তরার ফায়দাবাদ চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থিত একাধিক গোডাউনে জমা হচ্ছে। পরে ওখানকার কারখানাগুলোতে প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি দেওয়া এই রমরমা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে মিরপুর ও উত্তরার ব্যবসায়ীরা চুনোপুঁটি থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। রাজধানীতে তাদের একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে বলে জানা যায়। এমনকি তারা দামি গাড়িও ব্যবহার করেন। তাদের নামে একাধিক মামলা হলে জেলও খাটেন তারা। কিন্তু তাদের নয়-ছয়ের ব্যবসা বন্ধ হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন