- তালিকায় রয়েছে ডাবল-ক্যাবিন পিকআপ ৬০টি, মাইক্রোবাস (১২-১৬ সিট) ৩০টি এবং পেট্রোলিং মোটরসাইকেল (১৫০-১৬০ সিসি) ১৬টি
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ১০ বছরের বেশি পুরোনো ও অকেজো ঘোষিত যানবাহনের পরিবর্তে নতুন যানবাহন কেনার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থ বিভাগের সর্বশেষ চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এই প্রতিস্থাপন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বহুমুখী কার্যক্রমে ব্যবহৃত যানবাহনের ঘাটতি বড় অংশে কমে যাবে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্র জানিয়েছে, অকেজো ঘোষণার জন্য বাধ্যতামূলক বিআরটিএ পরিদর্শন প্রতিবেদন ১০৬টির সত্যায়িত কপি অর্থ বিভাগে চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে। যদিও ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ফ্যাসিলিটিজ ভবনের একাধিক কক্ষ পুড়ে যায়। ওই কক্ষগুলোর একটি ছিল ট্রান্সপোর্ট শাখার নথিপত্র সংরক্ষণাগার। এতে বিআরটিএ পরিদর্শন প্রতিবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ নথির অফিস কপি পুড়ে নষ্ট হয়। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়, যা নথিপত্রের সঙ্গে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
নথিপত্র ধ্বংস হয়ে গেলেও জেলা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকল্প উৎস থেকে ১০৬টি বিআরটিএ প্রতিবেদন পুনরায় সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। জননিরাপত্তা বিভাগের গঠিত কমিটির কার্যবিবরণীর অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সংশ্লিষ্ট সদস্যরা প্রতিটি যানবাহনের অবস্থা, নথিপত্র, বিআরটিএর পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফরম অনুযায়ী তথ্য যাচাই করেন। কমিটি প্রতিটি যানবাহনের অবস্থান, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ব্যবহারযোগ্যতা ও প্রযুক্তিগত অযোগ্যতা যাচাই শেষে অকেজো ঘোষণার অনুমতি দেয়।
অকেজো ঘোষণা অনুযায়ী যেসব যানবাহন বিক্রি করা হয়েছে, সেসবের বিক্রয়মূল্যের চালানের কপি অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সরকারি কোষাগারে জমার বিষয়টি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সুস্পষ্ট মতামতে জানিয়েছেÑ বাংলাদেশ পুলিশের প্রকট যানবাহন ঘাটতি রয়েছে। ফলে ১০ বছরের অধিক পুরোনো ও অকেজো ঘোষিত যানবাহনের প্রতিস্থাপক হিসেবে নতুন যানবাহন কেনার প্রস্তাব নীতিগতভাবে যৌক্তিক।
মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে, অর্থ বিভাগের চলতি বছরের ৪ আগস্ট পরিপত্রের শর্ত পূরণসাপেক্ষে এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন মোটরযান সংযোজন ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বিবেচনায় নতুন যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন যানবাহন কেনা বাস্তবায়ন যেন দ্রুত হয়, সে লক্ষ্যে চাহিদামতো সব নথিপত্র নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থ বিভাগের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বিপিএম স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, পুলিশি দায়িত্ব পালনে পুরোনো ও অকেজো যানবাহন বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই পুরোনো যানবাহনের প্রতিস্থাপনে নতুন গাড়ি সংযোজন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যানবাহনের বয়স, অবস্থা ও বারবার মেরামতের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ায় এগুলো কার্যত অনুপযোগী হয়ে গেছে। নতুন যানবাহন যুক্ত হলে মাঠ পর্যায়ে পুলিশি সেবার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
সদর দপ্তরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অকেজো ঘোষণার জন্য ১০৬টি যানবাহনের নথিপত্র প্রস্তুত আছে। সে অনুযায়ী, পুলিশের প্রস্তাব হলো সমসংখ্যক (১০৬টি) নতুন যান কেনা প্রয়োজনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে।
প্রতিদিনের টহল, অপারেশন ও পরিবহনের চাহিদার হিসেবে ডাবলÑক্যাবিন পিকআপ ৬০টি, মাইক্রোবাস (১২-১৬ সিট) ৩০টি এবং পেট্রোলিং মোটরসাইকেল (১৫০-১৬০ সিসি) ১৬টি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন