রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি

প্রেমঘটিত সংকটে আশরাফুলকে ২৬ টুকরো করে জরেজ-শামীমা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

প্রেমঘটিত সংকটে আশরাফুলকে  ২৬ টুকরো করে জরেজ-শামীমা

  • দুই ঘাতক ৫ দিনের রিমান্ডে

ঢাকার হাইকোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর খ-িত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার জরেজের ভাষ্য মতে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকা-টি ঘটেছে প্রেমঘটিত সংকটে।

অন্যদিকে জরেজের প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, প্রেমিকাকে দিয়ে ফাঁদে ফেলে আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের। সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র‌্যাবকে জানিয়েছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হলো, সেটির স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। তখন হত্যাকা-ের মোটিভ নিশ্চিত হতে জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল র‌্যাব, যাকে গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

গতকাল শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জরেজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটা আসলে একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল ড্রাম থেকে খ--বিখ- লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৬ টুকরা লাশের প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটা বেজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের। এ ঘটনায় শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন নিহতের বোন। এ হত্যাকা-ে নিহতের বন্ধু জরেজ নামে একজনকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে খোঁজার কথা বলেছিল পুলিশ। রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজকে এবং র‌্যাব কর্তৃক জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়াপ্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে রিসিভ করেন এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান। দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে চলতে থাকা যোগাযোগের বিষয়টি জরেজের স্ত্রী ধরে ফেলেন। আর এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন জরেজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলের।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, জরেজের স্ত্রী আশরাফুলকে শামীমার নাম্বার দেন। তাকে ফোন করে যেন তার স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলেন সেই অনুরোধ করেন। এর মধ্যে আশরাফুল শামীমাকে ফোন দেয়, একসময় তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রেমে পড়ে যায়। আশরাফুল ও শামীমা নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।

এর মধ্যে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবে, এর মধ্যে তারা দুইজনের জাপান যাওয়ার খরচ ৭ লাখ করে ১৪ লাখ দেবেন। জাপান যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং টাকা নেওয়ার জন্য শামীমা তাদের ঢাকায় যেতে বলেন, সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মিলে গত মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকালে তাদের সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে রিসিভ করেন শামীমা। এরপর তারা শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন।

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, নিজেরা একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় জরেজ ও শামীমা, কিন্তু সে ঘুমায় না। আশরাফুল বারবার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করে, এতে জরেজ বাধা দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং দেখতে একই রকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যায়। সে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মোবাইল নিতে আবার বাসায় ফেরত যায়।

ডিবিপ্রধান বলেন, জরেজ বাসায় ঢুকলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলে এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছে বলে জানায়। ঘুমিয়েছে কি না দেখার জন্য শামীমা আশরাফুলের গায়ে হাত দিলে সে জেগে যায়। তখন জরেজুল আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

আশরাফুল শামীমাকে বিকৃত যৌনাচারের জন্য জোর করতে থাকে, তখন শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেয়। এর মধ্যে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেয়। সে চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর দেখে আশরাফুল আর নড়াচড়া করছে না, সে মারা গেছে।

তারা এ অবস্থায় লাশটি নিয়ে রাতে এক বাসায় থাকে, নানা পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার সকালবেলা বাইরে থেকে ড্রাম এবং অন্যান্য জিনিস কিনে আনে। লাশটি ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে ওপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেয়। এরপর সিএনজিতে করে এসে হাইকোর্টের সামলে ড্রাম দুটি রেখে, তারা সায়েদাবাদ চলে যায়। সেখান থেকে শামীমা নিজের বাড়ি লাকসামে চলে যায় এবং জরেজ দাউদকান্দিতে তার পূর্বপরিচিত একজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন, যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

জরেজুল ও প্রেমিকা শামীমা রিমান্ডে: এদিকে ড্রাম থেকে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শাহবাগ থানার করা মামলায়, নিহতের বন্ধু জরেজুল ইসলাম ওরফে জরেজ ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিনের আদালত এই আদেশ দেন।

এদিন সন্ধ্যায় আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মো. আখতার মোর্শেদ। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি মো. জারেজুল ইসলাম ও শামীমা আক্তার এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ঘটনায় অন্য কোনো অজ্ঞাত আসামি জড়িত আছেন কি না, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। তবে শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!