*** দখল করা হয়েছে ৯ রেলস্টেশনের জায়গা
*** তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ও কৃষি খামার
*** রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ
সিলেট-আখাউড়া রেলপথের মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল-কুলাউড়াসহ ৯টি রেলস্টেশনে প্রায় হাজার কোটি টাকার জায়গা দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ও কৃষি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে এগুলো দখলে রাখলেও রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও কয়েক দিন পর এগুলো আবার তারা দখলে নেয়। এতে করে যুগ যুগ ধরে রেলের জায়গা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছে রেল বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজারে সচল ও বন্ধ প্রায় ৯টি রেলস্টেশন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ, শমশেরনগর ও কুলাউড়া স্টেশন সচল রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই চার স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের প্রায় হাজার কোটি টাকার জায়গা রয়েছে। এসব স্টেশনের কিছু জায়গা রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে বন্দোবস্ত আনলেও বেশির ভাগ জায়গা দখল করে ভোগ করছেন লোকজন। তবে বেশির ভাগ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আধাপাকা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, বন্ধ থাকা মনু, টিলাগাঁও, ভাটেরা, লংলা ও বরমচাল রেল স্টেশন এলাকা ও আশপাশের রেলওয়ের জায়গা দখল হয়ে গেছে।
সরেজমিন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, শমশেরনগর ও কুলাউড়া রেলস্টেশনে দেখা যায়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থাপনা বাজার বা শহরের ভেতরে থাকায় কেউ দোকান করে আবার কেউ ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এসবের বেশির ভাগ কৃষির জন্য বন্দোবস্ত নিলেও দখলদারেরা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন। আবার কেউ কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন।
রেলওয়ে বিভাগ বলছে, যারা রেলের জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছেন, তাদের নিয়মিত বার্ষিক নবায়ন করতে হয়। কেউ যদি নবায়ন না করেন, তাহলে তাদের বন্দোবস্ত অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নবায়ন করতে হলে খাজনা পরিশোধ করতে হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে কোনো বন্দোবস্ত দেয় না। রেলের যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে জায়গা ছাড়তে বাধ্য। এ ছাড়া ওই জমিতে কোনো স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা যাবে না।
স্থানীয়রা বলেন, অনেকেই প্রথমবার বিধি মোতাবেক বন্দোবস্ত নিলেও পরবর্তীতে আর নবায়ন না করে ভূসম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কর্মকর্তাকে খুশি করে রেলের জমি দখলে রেখেছেন। তবে দখলকারীরা বলেন, ৯৯ বছরের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো, রেলওয়ের জমি বার্ষিক হিসেবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। টানা ৯৯ বছর বন্দোবস্ত দেওয়া হয় না। শমশেরনগর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়ায় রেলস্টেশনের পাশে প্রতি শতক জমির ২০-২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ এসব গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রেলওয়ের প্রচুর পরিমাণে জায়গা রয়েছে। এসব জায়গার বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। যত সময় যাচ্ছে, রেলের জায়গা তত বেশি দখল হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল শহরের স্থানীয় বাসিন্দা রুহেল আহমেদ বলেন, শ্রীমঙ্গল স্টেশনে রেলওয়ের প্রচুর পরিমাণে জায়গা রয়েছে। বেশির ভাগ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো আবার ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযান করে জমি উদ্ধার করা হলেও কয়েক দিন পর আবার দখল হয়ে যায়।
শমশেরনগর বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব আহমেদ বলেন, সিলেট বিভাগের মাঝে সবচেয়ে বেশি জায়গার দাম শমশেরনগর বাজারের। এখানে প্রতি শতক জমি ৩০-৫০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। শমশেরনগর বাজারে রেলের অনেক জায়গা আছে, যা দীর্ঘদিন ধরে বৈধ-অবৈধভাবে ভোগ করে আসছেন কিছু লোক। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান করতেও আসে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের জায়গায় পাকা স্থাপনা তৈরি করেছেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দোবস্ত নিয়ে জায়গা ভোগ করছি। এ জন্য পাকা স্থাপনা তৈরি করেছি।
কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রুমান আহমেদ, শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার রজত রায় ও শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, রেলওয়ের জায়গাগুলো আমাদের ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে বন্দোবস্ত দেওয়া ও তদারক করা হয়। এখানে স্টেশন মাস্টার বা রেলেওয়ের কর্মচারীদের করার কিছু নেই। তবে রেলওয়ের জমি বন্দোবস্ত নিয়ে প্রাথমিকভাবে অহেতুক তাদের বদনামি করা হয়। তারা আরও বলেন, দখলকৃত রেলওয়ের জায়গাগুলো উদ্ধার হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ২৬ নম্বর কুলাউড়া কাচারির আমিন এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমি চাকরিতে একেবারেই নতুন যোগদান করেছি। শ্রীমঙ্গল থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত রেলওয়ের জমি তদারকির দায়িত্ব তার ওপর। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে থেকে কখনো ৯৯ বছরের জন্য জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হয় না। যারা জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছেন, তারা কখনো পাকা দালান করতে পারবেন না। কৃষিজমিতে কোনো স্থাপনা তৈরি করা যাবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপপরিচালক (ভূসম্পত্তি) কাজী ওয়ালি-উল হক বলেন, মৌলভীবাজারের যারা রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিভাগওয়ারী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলব।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন