- মুক্তিপণ চাওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। বিভিন্ন মাধ্যমে ৩৫ লাখ নেওয়ার পর ভুক্তভোগীকে ছাড়া হয়
- অন্যতম চক্রান্তকারী জিয়াউর রহমানসহ মামলায় মোট গ্রেপ্তার ৪
রাসেল নামে এক ব্যক্তিকে সৌদি আরবে অপহরণ করে বাংলাদেশে তার আপনজদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতের নাম জিয়াউর রহমান (৪২)। তিনি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার খোলাবাড়ী গ্রামের আব্দুল গণি মোল্যার ছেলে। গত বুধবার সন্ধ্যায় শালিখা থানাধীন হরিপুর বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
সিআইডির তথ্যে জানা যায়, এ বিষয়ে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় গত ২১ জানুয়ারি মামলা করেন রাসেলের শ্বশুর।
মামলার বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার মেয়ের জামাই ২০ বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করে এবং সেখানে নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহর থেকে অপহরণ করে। পরে রাসেলের বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে অজ্ঞাত ইমু আইডি ও ভিওআইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। না হলে রাসেলের ক্ষতি করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। মুক্তিপণের অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে তারা বাংলাদেশের কিছু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেয়। রাসেলের বড় ভাই সাইফুল ইসলামসহ অন্যরা উপায়ান্তর না পেয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়। সাইফুল ইসলাম খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকা থেকে বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে সর্বমোট ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং অপহরণকারীদের দেয়া ব্যাংক হিসাবে মোট ২৫ লাখ টাকা দেয়। সর্বমোট ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ পেয়ে ভিকটিম রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে। চলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা ভিকটিম রাসেলের হাতের ছাপ এবং আকামা আইডি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে অপহরণের ঘটনা ফাঁস হলে পুনরায় খুন ও জখমের ভয়ভীতি দেখায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে এসে পরিবারকে সমস্ত কিছু খুলে জানালে ভিকটিম রাসেলের শ্বশুর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।
সিআইডি জানিয়েছে, মামলাটি তদন্তে জানা যায় অপহরণকারীরা যেসব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরসমূহ দিয়ে সেগুলোত তথ্যাদি বিশ্লেষণসহ দেশে এবং বিদেশে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালীন অপহরণকারীদের দেওয়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরসমূহের তথ্যাদি পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তার আসামি মো. জিয়াউর রহমান এ ঘটনার অন্যতম একজন সক্রিয় সদস্য মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৌদি আরবে অবস্থিত অজ্ঞাতনামা অপহণকারীদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
এখন পর্যন্ত মো. জিয়াউর রহমানসহ এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃত দুজন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওই মামলাটি বর্তমানে সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট পরিচালনা করছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন