আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর ১৩ কর্মকর্তাসহ অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৩ ও ৭ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেনÑ বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে দুই মামলায় ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি)-সংক্রান্ত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার শুনানির দিন ছিল।
গত ৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি শুনানির জন্য ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
‘সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’
দেশের সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। টিএফআই ও জেআইসিতে গুম-নির্যাতনের দুই মামলায় গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের সশরীরে হাজির না হয়ে অনলাইনে হাজিরের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল রোববার এ মন্তব্য করেন।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতের কাজ শুরু হলে সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন তার আসামিদের অনলাইনে উপস্থিতির আবেদন শুনানি করেন।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। সিনিয়র মোস্ট মন্ত্রীরা হাজিরা দিচ্ছেন। তার পরও আপনি চাইলে হিয়ারিং করতে পারেন।’
পরে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তারা ভার্চুয়ালি হাজিরা দিতে চেয়েছেন। আদালত কমেন্ট করেছেন যে, আইন সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। যেহেতু বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি কারাগারে আছেন, তাকে কোর্টে অ্যাটেন্ড করতে হয় ফিজিক্যালি।’ অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারক, সিনিয়র মন্ত্রী, বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ যারা আসামি হয়েছেন, তারা রেগুলারলি আদালতে সশরীরে এই হাজিরা দেন। সুতরাং এখানে ডিফারেন্ট কোনো ঘটনা ঘটেনি, যে কারণে অন্য কোনো বিশেষ বিবেচনায় কাউকে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়ার বিষয়টা অ্যালাও করতে হবে।’ এই বিষয়টা আদালত প্রয়োজন মনে করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা মনে করেন, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। সবাইকে ইক্যুয়াল ট্রিটমেন্ট দেওয়া উচিত। তারপরও যেহেতু ডিফেন্স পক্ষ বলেছেন, তারা এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো পরবর্তীতে আবার শুনানি করতে চান। আদালত বলেছেনÑ হ্যাঁ, সময় হলে উনি আবার শুনবেন।
এই দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) গোপন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায় বর্তমানে ১৩ সেনা কর্মকর্তা কারাগারে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন